বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ রয়েছেন লিভার সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে অবহেলা নয় বরং জরুরি ভিত্তিতে নীতিগত পরিবর্তন ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার-স্পেশালাইজড হাসপাতালে আয়োজিত অষ্টম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘কম খাই, হাঁটি বেশি, ফ্যাটি লিভার দূরে রাখি’।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমইউ উপাচার্য ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) ডা. এএসএম মতিউর রহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. গোলাম আযম।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফ্যাটি লিভার বর্তমানে ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিসকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু লিভারের ক্ষতি করে না, বরং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এখনকার অধিকাংশ রোগী নিজেরাই জানেন না যে তারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। অনেক সময় কোনো উপসর্গ না থাকায় রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে, তখন লিভার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
অধ্যাপক মতিউর রহমান বলেন, ফ্যাটি লিভারকে এখনও অনেকেই ‘নীরব রোগ’ হিসেবে অবহেলা করছেন। অথচ এটি দেহের জন্য ধীরে ধীরে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। একে প্রতিরোধে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, খাদ্যনীতি, শিক্ষা, নগর পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।
ডা. গোলাম আযম জানান, যাঁরা প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, বাইরের খাবার খান এবং শারীরিক পরিশ্রম করেন না, তাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘এমনকি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত। অথচ ৯০ শতাংশই তা জানেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ‘ওষুধ বা সচেতনতার বাইরে গিয়ে আমাদের জনপরিসরে হাঁটার ব্যবস্থা, খেলার সুযোগ তৈরি করতে হবে। স্কুল, অফিস, বাসা—সব জায়গায় শারীরিক সচলতা নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, বেশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, বিশেষ করে ভাত খাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাব, এই রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে। তাই খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেই হবে।
স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে এই দিবস উপলক্ষে চিকিৎসকরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন ফ্যাটি লিভারকে অবহেলা না করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সচেতনতার দিকে নজর দিতে।