ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিয়ে নতুন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তেহরান। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে ইরানি নাগরিকদের মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ সরিয়ে ফেলতে সরাসরি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, জনপ্রিয় এই মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেই ইসরাইল তাদের নাগরিকদের নজরদারিতে রাখছে। যদিও তেহরান এখনো কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
ইরানের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে গোপনে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মেটার মালিকানাধীন অ্যাপটি এ অভিযোগকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই সতর্কবার্তার পরপরই মেটা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র সিবিএস নিউজকে বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে সব মেসেজ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড। আমরা বার্তার প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া আর কেউই বার্তা দেখতে পারে না। কোনো সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ারও করি না।”
নেটব্লকসের তথ্যমতে, হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে সতর্কতার পর ইরানে ইন্টারনেট ব্যবহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ জনগণের তথ্য প্রাপ্তি সীমিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ইরানের এ অভিযোগের বাস্তবতা নিয়ে। কারণ হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত হলেও এটি শতভাগ নিরাপদ নয়।
ইসরাইল অতীতে এনএসও গ্রুপের ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ২০১৯ সালে প্রায় ১,৪০০ জনের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করেছিল। এই ঘটনার জন্য মার্কিন আদালত ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল।
সম্প্রতি আরও একটি ইসরাইলি কোম্পানি ‘প্যারাগন সলিউশন্স’ উন্নত স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ১০০টির বেশি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট টার্গেট করেছে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির গবেষণা কেন্দ্রই ইসরাইলে অবস্থিত। এসব কোম্পানি আক্রমণাত্মক প্রযুক্তি তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীত ইতিহাসকে সামনে রেখে ইরানের উদ্বেগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ না থাকায় হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধের পদক্ষেপ কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ৩ বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী থাকা হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপগুলোর একটি। নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতা প্রশ্নে এই ঘটনার প্রভাব শুধু ইরানেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।