ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা এবং আকাশপথে ফ্লাইট বাতিল—সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি বড় ধাক্কার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তেজনা যদি এখনই না কমানো যায়, তাহলে এর অভিঘাত হতে পারে ভয়াবহ।
শুক্রবারের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েল একাধিক ইরানি সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করে এবং কিছু পারমাণবিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর পরদিন শনিবার ইরানের দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ইরানের দাবি, এ পর্যন্ত ২২০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৭০ জনের বেশি নারী ও শিশু।
জবাবে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে অন্তত ২৪ জনকে হত্যা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প Truth Social-এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পরবর্তী পরিকল্পিত হামলাগুলো আরও ভয়াবহ হবে এবং ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দ্রুত সমঝোতায় আসতে হবে।
তেল ও স্বর্ণের বাজারে বড় ঝাঁকুনি
ইসরায়েলি হামলার পরপরই বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৪.৬০ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি।
বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রপথে জ্বালানি পরিবাহিত হয় হরমুজ প্রণালীর মধ্য দিয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস।
তবে এই প্রণালী বন্ধ হলে ইরানের নিজস্ব রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে চীনে, যার ফলে দেশটি বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগে ধস
যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক সূচক শুক্রবার যথাক্রমে ১.১ এবং ১.৩ শতাংশ পড়ে যায়। মিশরের ইজিজিএক্স সূচক ৭.৭ শতাংশ কমে যায়। তেল আবিবের সূচক ১.৫ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের জার্মানি ও ফ্রান্সের বাজারও ১ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে।
তবে প্রতিরক্ষা কোম্পানি ও জ্বালানি খাতে কিছু কোম্পানি লাভবান হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমসের শেয়ার ৩ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে লকহিড, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং আরটিএক্সের শেয়ারমূল্যও বেড়েছে।
স্বর্ণের দাম প্রায় সর্বোচ্চে
বৃহস্পতিবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ছিল ৩৪২৬ ডলার, যা এপ্রিলের রেকর্ড ৩৫০০ ডলারের খুব কাছাকাছি।
বিমানে যাতায়াতে বিঘ্ন
ইরান, ইরাক, জর্ডান ও সিরিয়ায় বেশ কিছু এয়ারলাইনের ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ ও ইতিহাদসহ বড় বড় এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক রুটে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
ইরান ও ইরাক তাদের আকাশপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। জর্ডানও সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে।
বিশ্লেষক হামজা আল গাওদ মনে করেন, “মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী বিঘ্ন হতে পারে, তবে তা দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত হামলা শুধুমাত্র ইসরায়েল-ইরান পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ বিশ্ববাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হতে থাকবে।”
তবে পরিস্থিতি যদি আরও বিস্তৃত হয়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা।
