বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধে আইনি সংশোধনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভল্কার তুর্ক।
সোমবার (১৬ জুন) জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনে তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাকে অযথাভাবে সীমিত করে।”
জাতিসংঘের এই শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা জানান, তিনি সন্তোষ প্রকাশ করছেন যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে অগ্রগতি অর্জনের পথে আছে। তবে একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধের ক্ষমতা সংশোধিত আইনের মাধ্যমে দেওয়াকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অপসারণের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসে দলের সাইবার কার্যক্রমও।
এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওতাভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মহিলা লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান থাকলেও সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কোনো স্পষ্ট ধারা ছিল না। ২০২৫ সালের সংশোধিত অধ্যাদেশে সরকার এখন “কোনো সংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পারবে” বলে নতুন ক্ষমতা পেয়েছে।
অধিবেশনে তুর্ক আরও বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে পড়ছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, “বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সুনামির মতো আঘাত করবে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের মতো রপ্তানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তুর্ক উল্লেখ করেন, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে নারীদের মধ্যে কর্মহীনতা বাড়বে এবং লিঙ্গ বৈষম্য আরও প্রকট হবে, বিশেষ করে যারা কম বেতনের শিল্পক্ষেত্রে কাজ করেন। অনেক স্বল্পোন্নত দেশে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা নেই, ফলে জনগণ সম্পূর্ণরূপে অনিরাপদ অবস্থায় পড়বে।
“বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের যদি কেবল ‘উপকরণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তা মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী,” বলেন তুর্ক।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব স্থিতিশীলতার জন্য দরকার মানবাধিকারভিত্তিক টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। বাণিজ্য যুদ্ধ কিংবা প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।