বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।
মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্বিচারে ঋণ অনুমোদন এবং ব্যাংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আইনগত কাঠামো থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। অনেক সময় প্রভাবশালীরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করেও আইনি জটিলতা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেলে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তৈরি হবে এবং সাধারণ গ্রাহকদের আমানতের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
তারা বলছেন, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ঋণ অনুমোদন ও পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
ব্যাংক খাতের সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা জোরদার, ঋণের ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নীতিমালার দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
আর্থিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘমেয়াদে আরও গভীর সংকটে পড়বে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।