মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মাত্রা পেল ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। শনিবার রাতে ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান হামলায় ইরানের দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র, তেহরানের একটি বড় তেল শোধনাগার এবং শাহরান ফুয়েল ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ইরানের তেল মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সর্বশেষ এই হামলায় ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্রের আংশিক উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, তার দুই-তৃতীয়াংশই জাতীয় চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র কাতারের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে কাতার অংশকে বলা হয় নর্থ ফিল্ড।
শাহরান ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। অন্যদিকে, তেহরান শহরের দক্ষিণে শাহর-ই-রে এলাকার একটি পুরনো রিফাইনারিতে বড় অগ্নিকাণ্ড দেখা যায়। যদিও কিছু ইরানি গণমাধ্যম দাবি করেছে, এই রিফাইনারি পুরোপুরি অক্ষত, তবে তেলের ট্যাংকে আগুন লেগেছে তা তারা স্বীকার করেছে।
বুসেহর প্রদেশের ফাজর-ই-জাম গ্যাস প্ল্যান্টেও আগুন লাগার খবর এসেছে। এই প্ল্যান্ট দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস প্রক্রিয়াজাত করে থাকে। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব স্থাপনায় আঘাত ইরানের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকে আরও চাপে ফেলবে। এরই মধ্যে দক্ষিণ ও মধ্য ইরানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রতিদিন গড়ে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে।
শনিবারের হামলা ছিল ইসরায়েলের একটি কৌশলগত মোড়। এর আগে তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা থেকে বিরত ছিল তারা, যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের চাপের কারণে। তবে এবারকার হামলায় সেই নিয়ম ভেঙে গেছে।
বিশ্ববাজার ইতোমধ্যে এই সংঘাতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে প্রধান আঘাত এসেছিল সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায়। শনিবার থেকে তেলের অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে, যার প্রভাব আগামী সপ্তাহে বাজারে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরান এই উত্তেজনার মধ্যে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছে, যা বিশ্বের তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ পরিবহনের একমাত্র জলপথ। এটি বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অ্যালান ইয়ার বলেন, “ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি অংশ নিক। ইরানের সীমিত সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলের ভেতরে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না, তবে তারা প্রতিশোধ নিতে বাধ্য।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যতই প্রতিক্রিয়া দেখাক না কেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মতামতের তোয়াক্কা করছে না। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
বর্তমানে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। যদিও বিশ্ব সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে, উভয় পক্ষই আরও শক্ত প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে চলেছে।