প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। তবে এখনো নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
রবিবার (১৫ জুন) আগারগাঁওয়ের ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ভোট ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলেই হোক, আমরা প্রস্তুত। কিন্তু এখন থেকেই নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা পরিষ্কার হলে সরকারকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে ইসি ভোটের সময়সূচি চূড়ান্ত করবে।
সিইসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন, সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা রমজানের আগেই নির্বাচন হতে পারে। এর জবাবে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সরকারি বা আনুষ্ঠানিক বার্তা আমরা পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি যৌথ বিবৃতি দেখেছি, যা লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এটি কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরিত ঘোষণা নয়, ফলে একে আমরা অফিসিয়াল হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না।”
সিইসি বলেন, “অফিশিয়াল না হলে ইসি কোনো ঘোষণা ভিত্তিক কাজ করতে পারে না। যে কোনো বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অভিপ্রায় থাকে। আমাদের তা অফিসিয়াল মাধ্যমেই বুঝতে হবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিশেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই সময় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে, যারা বিভিন্ন দল ও মহলের সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আদালত দেখছে, আর সরকার এসব প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে।”
তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের কথাও উল্লেখ করেন, যিনি বলেছেন, অগ্রগতি যথাযথ হলে নির্বাচন এপ্রিলের মধ্যেই হতে পারে। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “তবে সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারি না।”
জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নির্বাচনের ৫৫ থেকে ৬০ দিন আগে গেজেট প্রকাশ করে সময়সূচি ঘোষণা করতে পারে ইসি। “আইন অনুযায়ী ছয় বা আট মাস আগে নির্বাচন তারিখ নির্ধারণের সুযোগ নেই,” বলেন সিইসি।
তিনি জানান, “আমরা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির ভিত্তিতে কাজ করছি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রায় সম্পূর্ণ, আইন সংশোধন, দল নিবন্ধন ও আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে কাজ চলছে।”
সিইসি পুনরায় বলেন, “সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা এগোতে পারি না। সব আলোচনার সূচনা এসেছে সরকারের দিক থেকে, কমিশন নয়।”
তিনি আরও বলেন, “উপদেষ্টা একটি অংশগ্রহণমূলক এবং ঐতিহাসিক নির্বাচন চান। আমরাও তাই চাই। প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা এলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব। আপাতত আমাদের স্বপ্নেও শুধু প্রস্তুতির কথাই ভাবি।”