ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তবে কর্মসূচিটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, এই পরিস্থিতি ইরানকে আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ঠেলে দিতে পারে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইসরায়েল নাতাঞ্জ ও ফোর্ডোতে অবস্থিত ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ইসফাহানে অবস্থিত ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
IAEA জানায়, নাতাঞ্জ কেন্দ্রের উপরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির (ISIS) স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে জানা যায়, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহে “ব্যাপক ক্ষতি” হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ভূগর্ভস্থ সেন্ট্রিফিউজগুলো অচল হয়ে পড়তে পারে।
ইরান জানিয়েছে, ফোর্ডো স্থাপনাতে ক্ষতি “নগণ্য”। তবে ইসফাহানে ইউরেনিয়ামের মজুত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠীর ইরান প্রকল্প পরিচালক আলি ভায়েজ বলেন, ইরান যদি ইউরেনিয়ামের বড় অংশ গোপন কোনো স্থাপনায় স্থানান্তর করে থাকে, তবে ইসরায়েলের জন্য এটি এক ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের বিশ্লেষক কেলসি ড্যাভেনপোর্ট বলেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারলেও পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। কারণ, এ ধরনের ভূগর্ভস্থ ও সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর সামরিক সহায়তা প্রয়োজন।
IAEA জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হামলাগ্রস্ত এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি। তবে দেশটির একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বুশেহরে হামলা হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারত।
IAEA প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা কখনোই করা উচিত নয়। এ ধরনের হামলা ইরানসহ গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে গেলে তেহরান ধীরে ধীরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ বিভিন্ন চুক্তি ভঙ্গ করতে শুরু করে।
মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ৪০৮.৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা আরও সমৃদ্ধ করলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম থেকে অন্তত ১০টি বোমা তৈরি করা সম্ভব।
তেহরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিপ্রায় অস্বীকার করে আসছে। তবে বিশ্লেষক ড্যাভেনপোর্ট সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলা ইরানের ভেতরে পারমাণবিক অস্ত্র সমর্থকদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
তিনি বলেন, “ইসরায়েলের হামলা ইরানকে কারিগরি দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে দিলেও রাজনৈতিকভাবে এটি তেহরানকে আরও কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে।”