ভারতের আহমেদাবাদ শহরে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৭৯ জনে। শনিবার পর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে এ সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এটি চলতি শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি জরুরি সংকেত পাঠানোর পরই আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের ফলে পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ছিলেন ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ মানুষ।
দুর্ঘটনার সময় বিমানে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধু একজন যাত্রী জীবিত উদ্ধার হন। ওই ব্যক্তি ৪০ বছর বয়সী বৃটিশ নাগরিক বিশ্বাশ কুমার রমেশ। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ডিডি নিউজকে তিনি বলেন, “আমি ভাবছিলাম মৃত্যুই সামনে, কিন্তু হঠাৎ চোখ খুলে দেখি আমি এখনো বেঁচে আছি।”
এদিকে, মৃতদের পরিচয় শনাক্তে শুরু হয়েছে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ। অনেক স্বজনকে আহমেদাবাদে এসে ডিএনএ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। শনিবার প্রথম একজন নিহত যাত্রীর মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাদা কফিনে মরদেহ তুলে পুলিশের পাহারায় তা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ, একজন কানাডিয়ান নাগরিক এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে কেউ ছিলেন রাজনীতিক, কেউ আবার ছিলেন কিশোর বয়সী চা বিক্রেতা। এই দুর্ঘটনায় যেসব পরিবার সদস্যদের হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও শোকে স্তব্ধ। নিহত এক যাত্রীর ভাই ইমতিয়াজ আলি বলেন, “এই শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।”
তদন্তে নেমেছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে একটি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ব্ল্যাক বক্স) উদ্ধার করা হয়েছে। অপরটি এখনও উদ্ধার হয়নি। ফ্লাইটটি কেন উচ্চতা হারিয়ে বিধ্বস্ত হলো তা নিয়ে চলছে ফরেনসিক তদন্ত।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিনজারাপু জানান, ইতোমধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার আটটি ড্রিমলাইনার বিমান পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বোয়িং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এবং যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। জানা গেছে, এটি ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর যা অবশিষ্ট ছিল তা ছিল শুধু একটি হোস্টেলের ছাদে আটকে থাকা টেইলপিস। উদ্ধারকারীরা এখনো সেখানে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে চলছে মরদেহ শনাক্তের কাজ, অন্যদিকে তদন্তকারীরা খুঁজে বের করতে চাইছেন এই ভয়াবহ ঘটনার আসল কারণ।