২৪১ জন যাত্রী নিহতের ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ এখনো নিজেকে জীবিত দেখে বিস্মিত। চারপাশে আগুন, ধ্বংসাবশেষ ও পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষের ভেতর চোখ মেলে প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি যে তিনি বেঁচে আছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। ২০০৯ সালে সার্ভিস শুরুর পর এই প্রথম বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের এমন দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে স্থানীয় এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রমেশ ভারতের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যমকে জানান, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মনে হয়েছিল বিমানটি আকাশে আটকে গেছে।
তার ভাষায়, “সবুজ ও সাদা আলো জ্বলতে শুরু করে। এরপর বিমানটি গতি বাড়ালেও পর্যাপ্ত উচ্চতায় উঠতে পারেনি এবং দ্রুত ভূপাতিত হয়।”
রমেশ জানান, তিনি ১১এ নম্বর সিটে বসেছিলেন। তার পাশের অংশটি একটি ভবনের নিচতলায় আছড়ে পড়ে। দরজা ভেঙে যাওয়ায় বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা তৈরি হয়। তিনি সিটবেল্ট খুলে নিজেকে বাইরে নিয়ে আসেন।
“চোখ খুলে দেখি আমি বেঁচে আছি,” বলেন তিনি।
বাম হাতে দগ্ধ হওয়া রমেশ তখন কিছুটা হাঁটেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় একমাত্র জীবিত যাত্রী রমেশের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।
হাসপাতালের শয্যা থেকে রমেশ বলেন, “আমি মোদিকে সব বলেছি। উনি আমার শারীরিক অবস্থার খবরও নেন।”
চিকিৎসক ধবল গামেতি জানান, রমেশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে এবং তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলেন। তবে আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত।
হাসপাতালে থাকা অবস্থায় নিজের বোর্ডিং পাস হাতে রেখেই রমেশ বলেন, “আমি নিজের চোখে দেখেছি কত যাত্রী ও ক্রু প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনাস্থলে বিমানের নানা অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।”
রমেশের ভাই অজয় ভালগি বিবিসিকে জানান, দুর্ঘটনার পর রমেশ লেস্টারে থাকা আত্মীয়দের ফোন করেছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী ও এক পুত্র রয়েছে তার।
ভালগি বলেন, “ও শুধু বলেছে ও ঠিক আছে। অন্য ভাইয়ের খোঁজ নেই। আমরা খুশি যে ও বেঁচে আছে, তবে অন্য ভাইয়ের জন্য মন খারাপ।”
রমেশের ভাই নায়ন কুমার রমেশ স্কাই নিউজকে জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ভাই তাদের বাবাকে ফোন করেন।
“ভিডিও কল করে বলেছিল, ‘বিমানটা ভেঙে পড়েছে। ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। অন্য কোনো যাত্রীকেও দেখছি না। বুঝতে পারছি না আমি কীভাবে বেঁচে গেলাম কিংবা বেরিয়ে এলাম।'”
এ দুর্ঘটনাকে ভারতের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। ঘটনাটি গোটা দেশজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। একমাত্র বেঁচে যাওয়া রমেশের সাহসিকতা ও ভাগ্য নিয়ে চলছে আলোচনা।