গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং সাহায্য বিতরণের স্থানগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে অনাহারে ঠেলে দিচ্ছে ইসরায়েল, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করেছে সুইডেন। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড এই মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কও গত জুন মাসের শুরুতে বলেছেন, গাজায় ত্রাণ বিতরণের স্থানগুলোর আশপাশে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাধারণ জনগণের ওপর অনাহার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের এক ধরনের অস্ত্র। এটি যুদ্ধাপরাধ। জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা কখনোই রাজনীতিকরণের বা সামরিকীকরণের বিষয় হতে পারে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে যে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতিশ্রুতি পালন করছে না। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। তারা অমানবিক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে।’’
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সুইডেন ঘোষণা করেছিল যে, তারা জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ-কে অর্থায়ন বন্ধ করবে। ইসরায়েল সংস্থাটিকে হামাস যোদ্ধাদের আড়াল দেওয়ার অভিযোগে নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে সুইডেন জানিয়েছে, তারা এখন অন্য জাতিসংঘ সংস্থার মাধ্যমে গাজায় সহায়তা পাঠাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী বেঞ্জামিন ডাউসা বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা হিসেবে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান করছি।’’
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সুইডেন গাজায় ১ বিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ডলার) মানবিক সহায়তা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য আরও ৮০০ মিলিয়ন ক্রোনার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়েও নতুন করে জোর দেওয়া হচ্ছে।