রেকর্ড তাপপ্রবাহের কারণে গত মে মাসে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলেছে অতীতের তুলনায় ১৭ গুণ দ্রুত। বুধবার বিশ্ব আবহাওয়া বৈশ্লেষণ নেটওয়ার্ক (ডব্লিউডব্লিউএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ২১ মে পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলার গতি ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের একই সময়ের গড় হারের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ফলে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে গ্রিনল্যান্ডের ভূমিকা আরও বেড়েছে।
ডব্লিউডব্লিউএ প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞান বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক ফ্রিডেরিকে ওটো বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া এ ধরনের ঘটনা সম্ভব হতো না।”
তিনি আরও বলেন, “এটি পুরো বিশ্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।”
একই সময়ে আইসল্যান্ডেও রেকর্ড তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ১৫ মে আইসল্যান্ডের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, যা ওই অঞ্চলের জন্য এই সময়ে নজিরবিহীন।
ডব্লিউডব্লিউএ জানিয়েছে, আইসল্যান্ডের ৯৪ শতাংশ আবহাওয়া স্টেশনে রেকর্ড তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময় সবচেয়ে গরম দিনটি ছিল শিল্প পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ।
ওটো বলেন, “বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষের কাছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপপ্রবাহ খুব বেশি চরম মনে না হলেও, এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি বড় ঘটনা।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের তাপমাত্রা ও বরফ গলার ঘটনা প্রতি ১০০ বছরে একবার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর জন্য এই পরিবর্তন গুরুতর প্রভাব ফেলছে। কারণ বরফ গলে যাওয়ায় ঐতিহ্যগত শিকার পদ্ধতিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তাদের জীবিকা এবং সাংস্কৃতিক জীবনধারায় হুমকি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের অবকাঠামোও এই ধরনের তাপমাত্রার জন্য প্রস্তুত নয়। বরফ গলে যাওয়ার ফলে বন্যা এবং রাস্তা ও অবকাঠামোর ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে।
২০২২ সালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পারমাফ্রস্ট গলে গিয়ে বহু আর্কটিক হ্রদে লোহা এবং অন্যান্য ধাতু ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়েছিল।
এ ছাড়া, গ্রিনল্যান্ডের গ্রামীণ অঞ্চলের বাড়িঘরগুলোতে পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় উচ্চ তাপমাত্রায় স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধির ঝুঁকিও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। এই ধরনের ঘটনা এড়াতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।