প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আগামী বছরের ১ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণকে এখন থেকেই এমন প্রার্থী বাছাই করতে হবে, যারা ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের উচিত এখন থেকেই আলোচনা শুরু করা যাতে সঠিক প্রার্থী নির্বাচিত হয়। দেশের রাজনীতি থেকে দলীয় সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও রাজনীতিকরণের মতো অপচর্চার অবসান ঘটানো জরুরি।
নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে এই নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলে জানান তিনি।
নতুন নির্বাচনে পরিচিত রাজনৈতিক দল ও প্রতীক থাকলেও, জনগণকে এমন প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে যারা দেশের সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করে বিদেশি স্বার্থ চরিতার্থ করতে আগ্রহী নয় এবং জনগণের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াবে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আগামী ঈদের আগেই রাষ্ট্র সংস্কার, আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। স্বচ্ছ নির্বাচন, রাষ্ট্র সংস্কার এবং বিচার কার্যক্রমই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা।
তিনি জানান, আগামী নির্বাচন যাতে জনগণের জন্য দুর্ভোগের কারণ না হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতীতে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থার কারণেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনই আওয়ামী লীগের একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উত্থানের কারণ।”
এক্ষেত্রে জনগণের দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সঠিক প্রার্থী বেছে নেওয়া। প্রার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায় করতে হবে যে তারা রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অবসান ঘটাবেন।
ভবিষ্যতের সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নির্ধারিত রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থীদের অঙ্গীকার নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করি।”
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এই কমিশনের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফল আসছে।
আগামী মাসে এই কমিশন “জুলাই চার্টার” নামে একটি রূপরেখা ঘোষণা করবে। এতে রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের সারাংশ থাকবে।
বক্তব্যের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “এই পবিত্র দিনে জাতি গঠনের জন্য আমাদের মধ্যে লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব এড়িয়ে চলতে হবে, নয়তো এ উৎসব শুধু আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নেবে।”
এছাড়া তিনি জনগণকে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর আহ্বান জানান।
শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশ এখনও যুদ্ধাবস্থার মধ্যে রয়েছে। ক্ষমতা থেকে উৎখাত আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি মিত্রদের বিরুদ্ধে আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও দৃঢ় করতে হবে।”