Tuesday, June 24, 2025
Homeরাজনীতিডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি, ঈদের পর রাজনৈতিক সংলাপে জোর দেবে দলটি

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি, ঈদের পর রাজনৈতিক সংলাপে জোর দেবে দলটি

বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। দলটি ইতোমধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ঈদুল আজহার পর থেকে এই প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক টিম গঠন করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালানো হবে।

দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশ অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ সংকটে আরও জর্জরিত হবে। এছাড়া ইতিহাসের উদাহরণ টেনে নেতারা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে অনেক দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ ও গৃহযুদ্ধ হয়েছে, বাংলাদেশেও অনিশ্চয়তা বাড়তে পারে।

স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়া উচিত। এত বছর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই করেছি, সেটি প্রতিদিন বিলম্বের কারণে হেরে যাওয়া মানে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আর দেরি করা যাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রায় ৯০ শতাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে। যারা বাধা দিচ্ছে তাদের অনেকেই নিবন্ধিত দল নয়। জনগণ শিগগিরই বুঝে যাবে, কারা তাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।”

ডিসেম্বর না জুন, ধোঁয়াশা কেন?

বিএনপির নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না তিনটি প্রধান কারণে।

প্রথমত, নতুন ছাত্র সংগঠন ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হতে সময় দিতে চাইছে সরকার, যাদের বেশিরভাগই পরোক্ষভাবে প্রশাসনের প্রতি সহানুভূতিশীল।

দ্বিতীয়ত, সমুদ্রবন্দর, করিডর ও স্টারলিঙ্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিদেশি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আরও সময় দরকার বলে মনে করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু ব্যক্তি ডিসেম্বরের পরে ক্ষমতায় থাকার আগ্রহ রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, “নির্বাচনের একটি খসড়া রোডম্যাপই বর্তমান অনিশ্চয়তা অনেকটাই দূর করতে পারত। কিন্তু সরকার তা এড়িয়ে যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক শক্তির অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সীমানা পারেও চাপ বাড়ছে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলোর আধিপত্য আরও বাড়বে।”

বিএনপির অবস্থান কোন দিকে?

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি কার্যত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায়। তবে সময়সীমা নিয়ে পরিবর্তন এলে দলটির অভ্যন্তরীণ সংকট বাড়তে পারে।

এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের যে ধোঁয়াশা চলছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান এবং সেনাপ্রধানের ভিন্নমত।”

এই বিষয়েই আমির খসরু বলেন, “সরকার ও আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক।”

অন্যদিকে সাইফুল হক বলেন, “নির্বাচন পেছাতে থাকলে অনির্বাচিত শক্তিগুলোর দাপট বাড়বে। আমরা সহযোগিতা করতে চাই, তবে এই অনিশ্চয়তা জাতিকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।”

বিএনপি আন্দোলনে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “আমরা এখনই কর্মসূচির চিন্তা করছি না। এর আগে ভিত্তি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে।”

RELATED NEWS

Latest News