Sunday, June 22, 2025
Homeজাতীয়র‌্যাবের গোপন হেফাজতে ছিলেন ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড সুভ্রত বাইন

র‌্যাবের গোপন হেফাজতে ছিলেন ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড সুভ্রত বাইন

দেশ-বিদেশে পরিচিত শীর্ষ অপরাধী সুভ্রত বাইনকে নিয়ে বড় ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে নিখোঁজ তদন্ত কমিশন। কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত এই অপরাধী ২০২২ সাল থেকে র‌্যাবের একটি গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি ছিলেন এবং ২০২৪ সালের ৬ থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রিপোর্টটি জমা দেওয়া হয় এবং বৃহস্পতিবার প্রেস উইং এর মাধ্যমে প্রতিবেদনটির কিছু অংশ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

সুভ্রত বাইন বাংলাদেশের একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী, যার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বহু মামলা। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকারের ২৩ জন মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পরবর্তীতে ইন্টারপোলও তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে।

২০১২ সালে নেপালের একটি কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানোর ঘটনাও তাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তোলে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাকে একাধিকবার আটক করা হলেও, জামিনে বেরিয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

কমিশনের তদন্ত অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে এক গোপন বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে সুভ্রত বাইনকে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং গ্রহণ করে। বিনিময়ে বাংলাদেশ এক নাগরিককে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে, যিনি আগে টিএফআই সেলে বন্দি ছিলেন।

কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সেই ব্যক্তি পরে ভারতে মামলার মুখোমুখি হয়ে জেল খেটে দেশে ফেরেন এবং ভারতীয় কাগজপত্রে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। একজন সহবন্দির মাধ্যমে তার টিএফআই সেলে থাকার সত্যতাও মেলে।

সুভ্রত বাইন অভিযোগ করেন, তাকে বাংলাদেশে আনা হয় ২০২২ সালের রমজানের ২৭ তারিখে। এই সময়কাল ভারতীয় মামলা নথিপত্রের সঙ্গে মিলে যায়। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি piles-সহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় একঘরে জীবন যাপন করতেন। টিএফআই সেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলতেন।

অনলাইনে ছড়ানো গুজবের বিপরীতে কমিশন নিশ্চিত করেছে, বন্দি অবস্থায় তার কোনও প্রশিক্ষণ চলছিল না। বরং তিনি নিঃসঙ্গ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

তবে মুক্তি পাওয়ার পর আবারও সুভ্রত বাইন তার পুরনো অপরাধ চক্র চালু করেছেন বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করে। তার একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক রয়েছে এবং হত্যার নির্দেশ দেওয়া আবারও শুরু করেছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

২০২৫ সালের মে মাসের শেষ দিকে তার গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছিল। কমিশনের মতে, এ ঘটনাটি দেখায় কিভাবে গোপন আটকের সংস্কৃতি একটি দেশের নিরাপত্তা কাঠামোকে দুর্বল করে।

প্রতিবেদনটি জানায়, “এত বড় আন্তর্জাতিক পরিচয়সম্পন্ন অপরাধীকে গোপনে আটক রাখার সিদ্ধান্ত শুধু র‌্যাবের পক্ষ থেকে আসা অসম্ভব। এর পেছনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা তার চেয়েও ওপরের স্তরের নির্দেশনা থাকতে পারে।”

কমিশনের অভিমত, “বাইনকে আটক রাখার পুরো সময়েই তার বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। কারণ হতে পারে, তাকে গোপনে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া তার আইনি অবস্থানকে জটিল করে তুলেছিল। এতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

“এই ঘটনা প্রমাণ করে, গোপন আটক ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং এতে ঝুঁকি আরও বাড়ে,” প্রতিবেদনে বলা হয়।

RELATED NEWS

Latest News