দীর্ঘ ১৮ বছরের যাত্রা শেষে অবশেষে ট্রফি হাতে পেলেন বিরাট কোহলি। আইপিএল শুরু থেকেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলেছেন তিনি। প্রতিবার নতুন আশায় মাঠে নেমে ফিরে এসেছেন খালি হাতে। কিন্তু এবার সব প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটল। কোহলি তার প্রিয় দলের হয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলেন।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেই ম্যাচটি কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় আরসিবির। পাঞ্জাব কিংসকে তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। মাঠের এক কোণায় দাঁড়িয়ে কোহলি তখন চোখে পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। সাবেক সতীর্থ এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে এই অনুভূতির কথা পরে ভাগ করে নেন তিনি।
কোহলির এই জয় শুধুই একটি শিরোপা অর্জন নয়। এটি তার ১৮ বছরের একটানা শ্রম, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, এবং বারবার ফিরে আসার এক মহাকাব্যিক পরিণতি। তিনি সব সময় নিজের সেরাটা দিয়েছেন, দলের পাশে থেকেছেন এবং কখনো অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলার কথা ভাবেননি।
ম্যাচ শেষে কোহলির প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগে পূর্ণ। তার চোখের জল শুধু আনন্দেরই ছিল না, বরং ছিল ত্যাগ ও সংগ্রামের সম্মিলিত এক বহিঃপ্রকাশ। শেষ বলটি ছোড়া মাত্রই তিনি হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। অনেকটা টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের মত, যিনি প্রতিপক্ষের ভুলে ট্রফি নিশ্চিত হলে মাঠেই নত হয়ে পড়েন।
কোহলির এমন প্রতীক্ষার গল্প আরও অসংখ্য সমর্থকের সঙ্গেই জড়িত। ব্যাঙ্গালোর থেকে হাজার হাজার সমর্থক এসেছিলেন স্টেডিয়ামে। ট্রেন, বাস, ফ্লাইটে ঠাসা ভিড় ছিল, টিকিটের দামও ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু তারা সবকিছু উপেক্ষা করে মাঠে এসেছিলেন তাদের দলের জন্য। সেই ৯২ হাজার দর্শকের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ দর্শক উপস্থাপনার শেষ অবধি মাঠে থেকে উদযাপন করেছেন এই ঐতিহাসিক জয়।
আরসিবি কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার জানিয়েছেন, ভাগ্যের জয়ও ছিল এতে। টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ায় ইনজুরিতে থাকা খেলোয়াড়রা সময় পেয়েছেন সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার। এরই মাঝে প্রতিপক্ষ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারও ছিটকে গিয়েছেন ফাইনালের আগে।
এই জয় শুধু কোহলির ক্যারিয়ারের নয়, বরং আইপিএলের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এক সময় বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য ‘গ্লোরিফায়েড ছুটি’ হিসেবে বিবেচিত টুর্নামেন্ট এখন বিশ্বমানের। কোহলির মতো একজন কিংবদন্তির চোখের জল এ টুর্নামেন্টের গুরুত্বের স্বীকৃতি।
জয় উদযাপনে কোহলির দলের জন্য ব্যাঙ্গালোরে থাকছে বড় আয়োজন। ওপেন বাস প্যারেড, সমর্থকদের জন্য শুভেচ্ছা জানানোর মুহূর্ত এবং ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গর্ব। এর আগের রাতে যদিও কোহলি জানতেন না কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, পরদিন সকালে ঘুম ভেঙে বুঝবেন এটা কোনো স্বপ্ন নয়।
তারা সত্যিই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন।