Sunday, June 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সাহায্যকেন্দ্রের পাশে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৩১

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সাহায্যকেন্দ্রের পাশে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৩১

গাজার রাফা এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২০ জনেরও বেশি, যাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। হতাহতদের স্থানীয় নাসের হাসপাতাল ও ব্রিটিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রবিবার সকালে স্থানীয় সময় ভোররাতে এই হামলা হয়। সেসময় অসংখ্য সাধারণ মানুষ খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিসাইল হামলার পর মানুষজন ছুটে পালিয়ে যান, পরে আবার ফিরে এসে আহতদের উদ্ধার কাজে অংশ নেন।

ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত চিত্রে দেখা যায়, রক্তাক্ত দেহ গাধার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এবং অনেকেই ক্ষতবিক্ষত এলাকায় খাদ্য সহায়তা বাক্স সংগ্রহে তৎপর হয়ে পড়েছেন।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস একে ‘দারুণ মর্মান্তিক’ বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ২৩টি মরদেহ রেডক্রসের মর্গে রাখা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এক আহতের ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ভাই তার সন্তানদের জন্য সাহায্য আনতে গিয়েছিল, সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন মানুষদের বলা হয় সাহায্য কেন্দ্রে যেতে, যদি সেখানে গিয়েই মরতে হয়?”

এই সহায়তা কেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ এর অধীনে পরিচালিত, যা ঐতিহ্যবাহী জাতিসংঘের চ্যানেলের বাইরেই কাজ করে থাকে।

হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ওই সহায়তা কেন্দ্রের ভিতরে বা আশেপাশে কোনো বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। তবে স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, নিহতদের শরীরে স্পষ্টতই বিমান হামলার চিহ্ন রয়েছে।

হামলার কয়েক ঘণ্টা পরও গাজার আকাশে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। প্রত্যুষে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া ও কম্পন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।

এদিকে, তেল আবিবে ইসরায়েলি নাগরিকরা রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সমঝোতার দাবি জানান।

একজন ইসরায়েলি নারী বলেন, “আমি দুঃখিত যে আমি এমন একটি দেশের নাগরিক, যেটি এখন ১৯৪০ সালের জার্মানির মতো আচরণ করছে। আমি মনে করি, গাজায় যা হচ্ছে, তা একটি গণহত্যা।”

অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা আবারও ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি হামাস যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আংশিক সম্মত হয়েছে। তারা ১০ জীবিত বন্দি মুক্তি এবং ১৮টি মৃতদেহ হস্তান্তরের কথা জানিয়েছে। বিনিময়ে তারা চায় যুদ্ধ বন্ধ, বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। কিন্তু মার্কিন দূত স্টিভ হোয়াইট এটিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুন:

ইসরায়েল জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো এমন পরিকল্পনা মেনে নেবে না, যেখানে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং সব বন্দির মুক্তি অন্তর্ভুক্ত নেই।

মূল প্রস্তাবের মধ্যে ছিল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি বিনিময় এবং গাজায় অবারিত সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিতকরণ। হামাস চায় এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে যাক। তবে ইসরায়েল তা বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

গাজায় এ পর্যন্ত একটানা সহিংসতার কারণে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজার জনসংখ্যা এখন চূড়ান্ত দুর্ভিক্ষের মুখে।

বিশ্ববাসীর নজর এখন এই সংঘাতের পরিণতির দিকে। এই সংকট কবে ও কিভাবে নিরসন হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

RELATED NEWS

Latest News