Sunday, June 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিক“আর ভিক্ষা নয়”—আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপের কথা স্বীকার করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

“আর ভিক্ষা নয়”—আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপের কথা স্বীকার করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক; ঢাকা, ১লা জুন ২০২৫: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বললেন, তিনি আর “ভিক্ষার ঝুলি” নিয়ে বিশ্বে যেতে চান না। কোয়েটায় কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এই বোঝা এখন সহ্য করা সম্ভব নয়।

“আমি এবং ফিল্ড মার্শাল (সৈয়দ আসিম মুনির) এই বোঝা আর বইতে চাই না,” বললেন শরিফ। “এই বোঝা শেষমেশ পাকিস্তানিরাই বহন করে।”

এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন তিনি এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সম্প্রতি তুরস্ক, ইরান, আজারবাইজান এবং তাজিকিস্তান সফর শেষ করেছেন। ২৫ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলা এই চার জাতির সফরে তারা আঞ্চলিক মিত্রদের কাছে পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন, বিশেষত ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।

বক্তব্যে শরিফ বলেন, “তারা (আন্তর্জাতিক মিত্ররা) এখন চায় আমরা তাদের সঙ্গে ব্যবসা করি, গবেষণা করি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অংশ নিই, পারস্পরিক লাভজনক বিনিয়োগ করি। তারা আর আমাদের ভিক্ষুক হিসেবে দেখতে চায় না।”

চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে “সময় পরীক্ষিত বন্ধু” বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন আমাদের দায়িত্ব এই সম্পর্ককে অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে রূপান্তর করা।”

দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট কথা বলেন। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, রপ্তানি বাড়ানো এবং প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর ওপর তিনি জোর দেন।

“যেসব কারখানা কাজ করছে না, তাদের আর টিকিয়ে রাখা যাবে না,” বললেন তিনি। “আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, রপ্তানি বাড়াতে হবে, এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।”

তবে ভেতরে ভেতরে পরিস্থিতি ভিন্ন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি বর্তমানে কারাবন্দি, নতুন একটি দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তার দল এখনো জাতীয় পরিষদের সবচেয়ে বড় দল এবং সরকারকে দমন-পীড়ন ও দুর্বল অর্থনীতির জন্য দায়ী করছে।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার হ্রাস পেয়েছে।

সরকারি রাজস্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এখন সুদ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে, যার ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা উন্নয়নে ব্যয় করার মতো অর্থ খুবই সীমিত।

গত ২৫ বছরে পাকিস্তান প্রতি পাঁচ বছর অন্তর দ্বিগুণ হারে ঋণ বাড়িয়েছে।

শাহবাজ শরিফের আগামী কর্মসূচিতে রয়েছে চীন ও সৌদি আরব সফর (জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে)। এছাড়া সূত্র বলছে, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন এবং ওমান সফরের পরিকল্পনাও করছেন।

এই স্বীকারোক্তির পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—আসলে কী সত্যিই বদল আসবে?

কেউ কেউ বলছেন, এটা খুব দেরিতে হলেও বাস্তব স্বীকারোক্তি। কেউ আবার মনে করছেন, এটা কেবল কথার ফুলঝুরি।

তবে কোয়েটার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল খানিকটা ভিন্ন।

হয়তো ক্লান্তি, হয়তো হতাশা। অথবা হয়তো তিনি প্রকাশ করলেন সেই অস্বস্তি, যা বহুদিন ধরে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনে জমে ছিল—এবার আর ভিক্ষা নয়, নিজে কিছু করে দেখাতে হবে।

RELATED NEWS

Latest News