আন্তর্জাতিক ডেস্ক; সিঙ্গাপুর, ১লা জুন ২০২৫: ভারতের সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে, মে মাসের শুরুতে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে তাদের কিছু যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল।
এর আগে ভারত সরকার এমনকি একটি বিমান ক্ষতির কথাও স্বীকার করেনি।
শনিবার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরি-লা ডায়ালগে, এশিয়ার শীর্ষ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে, ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান এই মন্তব্য করেন।
ব্লুমবার্গ সাংবাদিক হাসলিন্ডা আমিন তাকে প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে কি না। জবাবে চৌহান বলেন, “পুরোপুরি ভুল। এবং আমি বলেছি, এটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য নয়।”
কিন্তু তার পরের বক্তব্যেই তিনি ইঙ্গিত দেন যে কিছু বিমান সত্যিই ভূপাতিত হয়েছে।
“গুরুত্বপূর্ণ হলো, কেন সেগুলো পড়েছিল। সেটাই আমাদের জন্য বড় প্রশ্ন। আর আমরা পরে কী করলাম, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।
এটাই এখন পর্যন্ত ভারতের কোনও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সবচেয়ে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি যে, ওই সংঘাতে বিমান ক্ষতি হয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি জানাননি, তার কথায় বোঝা যায়, একাধিক বিমান হারানো হয়েছে।
এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, ভারতের পক্ষ থেকে একটি “কৌশলগত ভুল” হয়েছিল।
“ভালো দিক হচ্ছে, আমরা ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম। সেটা সংশোধন করে, দুই দিন পর আবার সব যুদ্ধবিমান উড়িয়েছিলাম, এবং দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছিলাম,” বলেন তিনি।
ভারত-পাকিস্তান এই সামরিক উত্তেজনার সূচনা হয়েছিল এপ্রিল মাসে, যখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কিছু পর্যটক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তান সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
এর পর থেকেই সীমান্তে উভয় দেশের মধ্যে বিমান হামলা এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, যা মে ১০ তারিখে একটি অস্ত্রবিরতিতে গিয়ে শেষ হয়।
পাকিস্তান দাবি করে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফরাসি নির্মিত রাফাল। তারা জানায়, এই হামলায় চীনা-তৈরি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়।
ভারতের শাসকদল বিজেপির মুখপাত্র নলিন কোহলি তখন সিএনএন-কে বলেছিলেন, “যদি এমন কিছু ঘটত, আমরা সেটা জানাতাম।”
তবে ফ্রান্সের এক উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেন, অন্তত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত। তিনি জানান, আরও একটি বা একাধিক রাফাল ভূপাতিত হয়েছে কি না, তা তারা খতিয়ে দেখছেন।
আরও পড়ুন:
- পাকিস্তানি গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে ভারতের জোরদার অভিযান, দেশব্যাপী গ্রেফতার
- অপারেশন সিন্দুর: পাকিস্তান ছিল অপ্রস্তুত, ২২ দিন পর মুখ খুললেন শেহবাজ শরিফ
- সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, চুক্তি বাতিল কি সম্ভব
- জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে পাকিস্তানকে আবারও FATF-এর ধূসর তালিকাভুক্ত করতে চায় ভারত
- পাকিস্তানের হামলায় ভারতের সীমান্তে ধ্বংস ১০ হাজার বাড়ি, ঘরছাড়া অসংখ্য মানুষ
- জাতির উদ্দেশে মোদির হুঁশিয়ারি: পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল বরদাশত করা হবে না
সেই সময় ভারতের অভ্যন্তরেও কিছু প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন, তারা আকাশ থেকে একটি বিমান আগুনসহ পড়ে যেতে দেখেছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত সরকার এই বিষয়ে নিরব ছিল। জেনারেল চৌহানের বক্তব্য সেই নীরবতা ভাঙল।
তবে তিনি বিমান হারানোর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা না করে জোর দেন অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপে।
“ব্যাটলফিল্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কীভাবে শিখলাম, আর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দিলাম,” বলেন তিনি।
মে ১০ এর অস্ত্রবিরতির পর দুই দেশ শান্ত থাকলেও, অবিশ্বাসের দেয়াল রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরেক দফা সংঘাত হতে পারে, এমন শঙ্কাও অস্বাভাবিক নয়।
ভারত এখন স্বীকার করেছে, কিছু একটা ভুল হয়েছিল। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আগামী দিনগুলোতে এই ঘটনাগুলোর স্মৃতি দুই দেশের অবস্থানকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।