বিনোদন ডেস্ক: একটি ছোট মেয়ে একটি উজ্জ্বল হলুদ মাছ গিলে ফেলে। এরপর সে একটি কার্ট টেনে বলিভিয়ার বিশাল মরুভূমি অতিক্রম করতে শুরু করে, একটাই উদ্দেশ্য—স্বর্গে পৌঁছানো।
সিয়েলো চলচ্চিত্রের এই সূচনা যেন ধাক্কা দেয়। আট বছরের সান্তা পালাচ্ছে। স্বপ্ন নয়, বাস্তব থেকে। এক নিপীড়ক বাবার হাত থেকে মা ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য এক অজানা পথে যাত্রা তার। পথেই দেখা হয় পুরোহিত, পুলিশ এবং বলিভিয়ার প্রথাগত নারী কুস্তিগির ‘চোলিতা’দের সঙ্গে।
চলচ্চিত্রটি মার্চে পর্তুগালের ফান্তাসপোর্তো উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হয়, এবং জিতে নেয় বিশেষ জুরি পুরস্কার, দর্শক পুরস্কার ও সেরা চিত্রগ্রহণের সম্মাননা। এবার এটি SXSW লন্ডনে প্রদর্শিত হবে ৬ ও ৭ জুন।
“একটা ছোট মেয়ে মাছ গিলে ফেলছে—এই দৃশ্যটা মাথায় ঘুরছিল,” বলেন পরিচালক আলবার্তো সিয়াম্মা। “কেন জানি না, কিন্তু সেটা আমাকে টেনেছিল।”
এই ধরনের ছবি বা চিন্তা আগে থেকে তার মাথায় থাকলেও, বলিভিয়ান বন্ধু ও তার স্ত্রীর সঙ্গে বার্লিনে দেখা হওয়ার পর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। তাদের পারিবারিক অ্যালবামের ছবি দেখে তিনি মুগ্ধ হন। সেখান থেকেই আসে প্রথম খসড়া।
যদিও ছবিটিতে ধর্মীয় প্রতীক, যেমন মাছ বা স্বর্গ, ব্যবহৃত হয়েছে, সিয়াম্মা ছবিটিকে ধর্মীয় বলতে নারাজ।
“আমি নিজে ধর্মে বিশ্বাসী নই,” বলেন তিনি। “কিন্তু বিশ্বাস নিয়ে আমি বরাবরই মুগ্ধ। আমরা আজও আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি, ‘আসলে এখানে কী হচ্ছে?’ সেই প্রশ্নই তো ধর্ম তৈরি করেছে।”
এই জিজ্ঞাসা-ভিত্তিক ভাবনা সিয়েলো-র সুর তৈরি করেছে। গল্প নয়, অনুভূতির মাধ্যমে দর্শককে নেয়া—এটাই লক্ষ্য ছিল। “এটা যেন এক পুলে ঝাঁপ দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে নদীতে পরিণত হওয়া,” বলেন সিয়াম্মা।
চরিত্রে কাজ করেছেন নতুন ও অভিজ্ঞ বলিভিয়ান অভিনেতারা। সান্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৮ বছরের ফারনান্দা গুতিয়েরেজ আরান্দা, যিনি আগে কখনো পেশাদার অভিনয় করেননি। জুমে তার সঙ্গে প্রথম আলাপেই সিয়াম্মা বুঝে যান, এই মেয়েটি বিশেষ।

“সে কিছুই অভিনয় করছিল না। সব কিছুই সত্যি অনুভব করছিল,” বলেন পরিচালক। “ওর কান্না, হাসি—সবই সত্যি।”
চাপের মুহূর্তেও শিশুটি দৃঢ় ছিল। এমনকি শুটিংয়ের ঠিক ২০ মিনিট আগে সংলাপ বদলেও নতুন লাইন মুখস্থ করে ফেলেছিল সে।
চলচ্চিত্রে আরও একটি ব্যতিক্রমী দিক—বলিভিয়ার বাস্তব ‘চোলিতা’ নারী কুস্তিগিরদের অন্তর্ভুক্তি। তারা অভিনয় করেছেন নিজেদের মতো করেই।
“তারা সবসময় গান, মজা আর চিৎকারে ভরপুর,” বলেন পরিচালক। “তাদের আলাদা করে অভিনয় শেখানোর দরকার হয়নি।”
সাশা সালাভেরি, যিনি একজন কুস্তিগির এবং সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তার জন্য স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে তিনি যতটা কোমল, ততটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চরিত্রে।
চলচ্চিত্রটি যুক্তরাজ্যের লুচাদোরা ফিল্মসের ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন সিয়াম্মা, জন ডান্টন-ডাউনার, আলেক্সা ওয়া ও বেটিনা কাদোরি। বলিভিয়ার পুকারা ফিল্মসও সহায়ক প্রযোজক। বিক্রয় দায়িত্বে রয়েছে ফিল্ম সিকার্স।
বলিভিয়ায় কাজের অভিজ্ঞতা ছিল সীমিত হলেও, সিয়াম্মা ছিলেন মুগ্ধ।
“তাদের কাছে হয়তো আধুনিক প্রযুক্তি নেই, কিন্তু কল্পনা শক্তি দারুণ,” বলেন তিনি। “বলিভিয়ার মতো জায়গায় আবার কাজ করতে চাই ১০০% নিশ্চিতভাবে।”
চলচ্চিত্রটি স্পষ্ট কোনো ধারায় পড়ে না। এটি পালানোর গল্প, আবার ভালোবাসা ও বিশ্বাসের সন্ধানের গল্পও বটে। যেসব প্রশ্নের উত্তর নেই, সিয়েলো যেন সেগুলো নিয়েই পথ চলা।
এই গল্প এখানেই শেষ নয়। পরিচালক ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্ব লেখার কথা ভাবছেন। পরবর্তী অংশের মূল কেন্দ্র হবে বলিভিয়ার জঙ্গল।
তবে আপাতত উৎসব নিয়েই ব্যস্ত তিনি। কারণ, লিখতে গেলে সিয়াম্মার নিজের ভাষায়, “আমি একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে যাই, শুধু আমি আর আমার ল্যাপটপ।”
আর ঠিক সে কারণেই হয়তো সিয়েলো এমন একটি চলচ্চিত্র, যেটি মনে হয় যেন একা বসে কেউ স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝখানে লিখে ফেলেছে। যেখানে দর্শক জানেই না, পরবর্তী বাঁকে কী অপেক্ষা করছে।