বিনোদন ডেস্ক: ডিজনির নতুন লাইভ-অ্যাকশন রিমেক লিলো অ্যান্ড স্টিচ মুক্তির প্রথম চারদিনেই স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মেমোরিয়াল ডে উইকএন্ড আয় করেছে। কিন্তু ব্যবসায়িক সাফল্যের মাঝেও ছবিটির কিছু কাহিনিচিত্র ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
২০০২ সালের অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রটি ছিল একটি হাওয়াইয়ান মেয়ে লিলো এবং তার এলিয়েন বন্ধু স্টিচকে ঘিরে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক সহমর্মিতা ছিল মূল উপজীব্য। রিমেকে এই মূল কাঠামো থাকলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে—বিশেষ করে শেষ অংশে।
মূল চলচ্চিত্রে বড় বোন নানি সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লিলোর অভিভাবক হিসেবে থাকেন। অথচ রিমেক সংস্করণে, সিডনি এলিজাবেথ আগুয়াদং অভিনীত নানি কলেজে পড়তে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান এবং লিলোর অভিভাবকত্ব রাজ্যকে দিয়ে দেন। এরপর লিলোকে এক প্রতিবেশী লালন-পালন করেন।
এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি পোস্টে এই সিদ্ধান্তকে “হাওয়াই উপনিবেশিকীকরণকে সমর্থন” হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, যা ২ লক্ষের বেশি লাইক পায়। অনেকেই বলছেন, এটি হাওয়াইয়ের ‘ওহানা’ বা সম্প্রসারিত পরিবারের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।
ওহু দ্বীপে জন্ম নেওয়া লেখিকা মারায়া রিগ The Hollywood Reporter-কে বলেন, “মূল চলচ্চিত্রটি ছিল ফস্টার কেয়ার, কারাব্যবস্থা এবং হাওয়াইয়ের উপনিবেশিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। নানির রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মূল বার্তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে ‘ওহানা মানে পরিবার’—এই মূল্যবোধটাই যেন হারিয়ে গেছে।”
তবে ছবিটি শুধু বিতর্কই নয়, সমালোচকদের কাছেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। রটেন টমেটোজে ছবিটির রেটিং ৬৯ শতাংশ এবং অনেকেই এটিকে “মূল ছবির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল এবং কিছুটা নতুনত্ব যুক্ত” হিসেবে দেখছেন।
পরিচালক ডিন ফ্লেইশার ক্যাম্প সামাজিক মাধ্যমে এমন দর্শকদের পোস্ট শেয়ার করেছেন, যারা নতুন শেষ অংশটিকে আরও “বাস্তবসম্মত” বলে অভিহিত করেছেন। এক তরুণী তার কিশোরী মা হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তার মতো বাস্তবতা যারা পার করেছেন, তারা নতুন এই পরিণতিকে ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। ক্যাম্প লিখেছেন, “এটা মনে হচ্ছে, বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি এই পরিণতির সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন।”
এই বিতর্ক মূলত হাওয়াইকে ঘিরে হলিউডের উপস্থাপনা ও প্রতিনিধিত্বের দীর্ঘদিনের আলোচনার অংশ। নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেলিয়া কনজেট বলেন, “মূল অ্যানিমেটেড ছবি একটি হাওয়াইয়ান পরিবারকে কেন্দ্রে রেখেছিল, যা প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু একই সঙ্গে এতে এমন কিছু উপাদান ছিল যা সংস্কৃতিকে স্টিরিওটাইপ হিসেবে তুলে ধরে, যেমন এলভিস প্রেসলিকে হাওয়াইয়ের প্রতীক হিসেবে দেখানো।”
তিনি আরও বলেন, “ওহানার মূল ভাবনা ছিল সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা, যেখানে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। নানির লিলোকে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা সেই মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।”
কিছু দর্শক অভিনেত্রী আগুয়াদংয়ের গায়ের রঙ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ অ্যানিমেটেড নানির তুলনায় তিনি তুলনামূলক হালকা ত্বকের। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, এই চরিত্রটি হাওয়াইয়ের বৈচিত্র্যময় বাস্তবতা প্রতিফলিত করে।
এ ধরনের বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৫ সালের Aloha ছবিতে এমা স্টোনকে চীনা ও হাওয়াইয়ান বংশোদ্ভূত চরিত্রে কাস্টিং করার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এমনকি The White Lotus সিরিজের প্রথম সিজনেও হাওয়াইয়ানদের প্রান্তিক করে দেখানোর অভিযোগ ওঠে।
রিগ বলেন, “লিলো অ্যান্ড স্টিচ যেখানে হাওয়াইয়ান শ্রম ও তাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিল, সেখানে The White Lotus-এ হাওয়াইয়ান চরিত্রগুলো বা তো একদম প্রান্তে ছিল, নয়তো গল্পেই অনুপস্থিত।”
ডিজনির হাওয়াইতে একটি রিসোর্ট আছে—আউলানি, যা ২০১১ সালে চালু হয় এবং যেখানে স্টিচ চরিত্রটি অতিথিদের বিনোদন দেয়। এই রিসোর্ট স্থানীয়দের চাকরির সুযোগ দিলেও, কনজেট মনে করেন এটি হাওয়াইকে একটি থিম পার্কের মতো বানিয়ে দেয়। “এটি পর্যটনের জন্য নির্মিত বিনোদনের অংশ, যা প্রকৃত সংস্কৃতির বদলে একধরনের বানানো অভিজ্ঞতা তুলে ধরে।”
তবে সবাই সমালোচনামুখী নয়। হাওয়াইয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস সেরেনো প্রশংসা করেন যে, চিত্রনাট্যে হাওয়াইয়ান লেখক ক্রিস কেকানিওকালানি ব্রাইট কাজ করেছেন। সেরেনো বলেন, তিনি নতুন হাওয়াইকেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী, যেমন জেসন মোমোয়ার Chief of War এবং মার্টিন স্করসেসি ও ডোয়েইন জনসনের আসন্ন অপরাধচিত্র।
স্করসেসির মতো একজন শ্বেতাঙ্গ নির্মাতা হাওয়াইয়ের গল্প বলবেন—এটি বিতর্কিত হতে পারে, স্বীকার করেন সেরেনো। তবে তিনি বলেন, “মূল ব্যাপার হচ্ছে, কে শুনছে এবং কে স্থানীয়দের কথা গল্পে যুক্ত করছে।”
লিলো অ্যান্ড স্টিচ এখন আর শুধুই একটি পারিবারিক সিনেমা নয়। এটি হয়ে উঠেছে বৃহত্তর এক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—যেখানে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, হাওয়াই কার, আর হাওয়াইয়ের গল্প কে বলবে।