প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করবে। তিনি একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে সব বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সম্মানজনক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। তিনি যোগ করেন, “তবে যেকোনো আগ্রাসী বাহ্যিক আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আমাদের সর্বদা প্রস্তুত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে।” এই লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর যৌথ অভিযানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেছিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সময়ও সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে ছিল এবং চলমান জাতীয় পুনর্গঠন ও সংস্কার কার্যক্রমে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলিত নেতৃত্বের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে দেশপ্রেমকে融合 করে জাতির জন্য ত্যাগ ও সেবার এই ঐতিহ্য অব্যাহত রাখবে।”
গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে সফলভাবে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ১০টি মিশনে নিয়োজিত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণে অন্যতম শীর্ষ দেশ এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যাতে বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং ও উচ্চ ঝুঁকির পরিবেশে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কূটনীতিক ও অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই উপলক্ষে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর জনগণের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। আপনাদের দেশগুলো আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যে চমৎকার প্রশিক্ষণ সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করেছে, সেজন্যও আমি কৃতজ্ঞ।”
জাতিসংঘের পতাকাতলে বিশ্ব শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করাকে বাংলাদেশি সেনাদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ ও দারুণ অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টায় সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে জাতিসংঘকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন।
