Thursday, November 13, 2025
Homeজাতীয়শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আজ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আজ

জুলাই আন্দোলন ঘিরে মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিও আসামি, নভেম্বরের শেষে রায় হওয়ার সম্ভাবনা

গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের’ অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দুই শীর্ষ সহযোগীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আজ নির্ধারণ করতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

আইসিটির একজন প্রসিকিউটরের মতে, নভেম্বরের শেষ দিকে এই রায় ঘোষণা করা হতে পারে।

রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী বিক্ষোভের আহ্বানের পর ঢাকা মহানগরীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী। তবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রসিকিউটররা।

আইসিটির প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনার বিচার স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ রায় নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, কিন্তু আমরা এটিকে ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছি না।”

আইসিটি-১ এর তিন সদস্যের বেঞ্চ—বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী—আজ তারিখ নির্ধারণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আইসিটির আরেক প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, “ট্রাইব্যুনাল রায় দিতে আরও এক সপ্তাহ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময় নিতে পারে।”

হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

এই প্রথম শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন—যে ট্রাইব্যুনাল তার নিজের সরকারই প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি।

গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শেষ হয় এবং ২৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করে। শেখ হাসিনা ও কামাল অনুপস্থিতিতে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন, অন্যদিকে হেফাজতে থাকা মামুন অপরাধ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকারের পতন হলে ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করে আসছেন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিনগুলোতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২১ দিনের এই রক্তপাত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। দেশের ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।

মৃত্যুদণ্ডের আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের

রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনেছে এবং গণহত্যা ও অন্যান্য নৃশংসতার জন্য কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির নীতির অধীনে হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে।

পলাতক হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমির হোসেন তিন আসামিকেই নির্দোষ দাবি করে তাদের খালাস চেয়েছেন।

১৩৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের সঙ্গে ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার দালিলিক, ভিডিও এবং অডিও প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে। শুনানির সময় কিছু রেকর্ডিং চালানো হয়, যার মধ্যে একটিতে শেখ হাসিনাকে অভ্যুত্থানের সময় তার সহযোগীদের “ছাত্রদের গুলি করার” নির্দেশ দিতে শোনা গেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তালিকাভুক্ত ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, মামুনের বিবৃতিসহ মোট সাক্ষী ৫৪ জন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম উভয়েই সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, “১,৪০০টি হত্যার জন্য শেখ হাসিনার ১,৪০০ বার ফাঁসি হওয়া উচিত।”

অন্যান্য বিচারাধীন মামলা

হাসিনা তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে কথিত গুমের অভিযোগে আরও দুটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি। এছাড়া ২০১৩ সালের ৫-৬ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর চালানো অভিযানের ঘটনায় আরেকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

RELATED NEWS

Latest News