Saturday, November 15, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যএপিআই শিল্প: আমদানি নির্ভরতা কমাতে নীতি সহায়তার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

এপিআই শিল্প: আমদানি নির্ভরতা কমাতে নীতি সহায়তার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন ও প্রণোদনা চালুর সুপারিশ

দেশের অভ্যন্তরীণ ওষুধের চাহিদার প্রায় পুরোটাই পূরণ করলেও বাংলাদেশের ওষুধ খাত এখনো অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) বা ওষুধের মূল কাঁচামাল আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই নির্ভরতা একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তেমনই বৈশ্বিক বাজারে যেকোনো সংকটের সময় জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

এই সংকট মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় পর্যায়ে এপিআই উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে অবিলম্বে নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক bottleneck দূর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এই খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।

বুধবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে “এপিআই শিল্পের উন্নয়নে নীতি ও বাস্তবায়ন কৌশল” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এই সুপারিশগুলো উঠে আসে। “অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ (এএইচআরবি)” এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিএমইউ-এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও এএইচআরবি-এর যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. মোহাম্মদ মোস্তাক হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও এএইচআরবি-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

ডা. হামিদ তার প্রবন্ধে জোর দিয়ে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এপিআই উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ওষুধের সরবরাহ ব্যবস্থা স্থিতিশীল হবে, উৎপাদন খরচ কমবে এবং জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ আরও সাশ্রয়ী হবে। তিনি উৎপাদন-ভিত্তিক প্রণোদনা (পিএলআই), গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) অনুদান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ ও পুনঃঅর্থায়ন সুবিধাসহ ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুর প্রস্তাব করেন।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) সভাপতি এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুকতাদির বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ওষুধের দাম সমন্বয় না হওয়ায় স্থানীয় প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধ কোম্পানি এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন। তিনি আরও বলেন, এপিআই খাত বর্তমানে দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে—জ্বালানি সংকট এবং সলভেন্ট ইন্টারমিডিয়েট অনুমোদনে বিলম্ব।

বাপির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, শুধু কমিটি গঠনের বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে এপিআই الصناعية পার্কের জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও অবকাঠামো এখনো অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগও অনিশ্চিত।

বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাইমা) সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে ভারত ও চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে, যাদের উভয়েরই শক্তিশালী নীতিগত ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান।

গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধ বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। স্থানীয় পর্যায়ে এপিআই উৎপাদন ছাড়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

বাপির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, “আমরা দুই বছর আগে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছি। আমরা এখন প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা সুদ দিচ্ছি, অথচ এখনো গ্যাস সংযোগ পাইনি। এমন সমস্যার সমাধান না হলে বিনিয়োগকারীরা এপিআই পার্কে আস্থা হারাবে।”

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান ওষুধ শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

অধিবেশনের শেষে সঞ্চালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন তিনটি প্রধান সুপারিশ তুলে ধরেন:
১. স্থানীয় এপিআই উৎপাদনের জন্য আর্থিক প্রণোদনা চালু করা।
২. একটি স্থায়ী জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা।
৩. মুন্সিগঞ্জের এপিআই শিল্প পার্কে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা।

RELATED NEWS

Latest News