Wednesday, November 12, 2025
Homeখেলাধুলাক্রিকেটধৈর্য আর পরিশ্রমের পুরস্কার, অভিষেকেই জাত চেনালেন হাসান মুরাদ

ধৈর্য আর পরিশ্রমের পুরস্কার, অভিষেকেই জাত চেনালেন হাসান মুরাদ

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় থেকে জাতীয় দল, শান্ত স্বভাবের স্পিনারের সফল পদার্পণ; প্রথম দিনেই তুলে নিলেন দুই উইকেট

হাসান মুরাদ তখন সদ্যই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছেন ঐতিহাসিক অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হিসেবে। দেশজুড়ে চলছিল উৎসব আর গণমাধ্যমের উন্মাদনা। কিন্তু তরুণ এই বাঁ-হাতি স্পিনার প্রচারের আলোয় খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না।

যখন তার অনেক সতীর্থই খ্যাতির স্বাদ উপভোগ করছিলেন, মুরাদ তখন নীরবে তার নিজ শহর কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন। তার ভাবনায় তখন সিনিয়র ক্রিকেট।

এই প্রতিবেদক তখন তাকে শ্যামলী ক্লাব মাঠের কংক্রিটের উইকেটে অক্লান্তভাবে বল করতে দেখেছিলেন। বলের পর বল, তিনি গুড-লেংথ একই জায়গায় বল ফেলে যাচ্ছিলেন, শান্ত নিবিষ্টতায় নিজের রিলিজ পজিশন নিয়ে কাজ করছিলেন। ডেলিভারির ফাঁকে তিনি তার বন্ধুর বোলিং অ্যাকশনও ঠিক করে দিচ্ছিলেন, যা তার মধ্যে থাকা ছাত্র এবং শিক্ষক সত্তার এক ঝলক দেখিয়েছিল।

সেই নীরব সাধনার ফলও মিলল দ্রুতই। ওই বছরের শেষের দিকে, মুরাদ জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ১৫.৫৮ গড়ে ৩৩ উইকেট নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর বোলিং চার্টের শীর্ষে ছিলেন। পরের বছরের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) তিনি আবারও ১৯.৪৫ গড়ে ২২টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হন।

তিনি সেখানেই থেমে থাকেননি। পরবর্তী ২২টি প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসে মুরাদ ৬৩টি উইকেট নেন, যা জাতীয় নির্বাচকদের আর উপেক্ষা করার সুযোগ দেয়নি।

নভেম্বর ২০২৩-এ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের জন্য তিনি প্রথম টেস্ট দলে ডাক পান, কিন্তু প্রতিযোগিতা এবং দলীয় সমন্বয়ের কারণে তাকে আরও প্রায় দুই বছর সাইডবেঞ্চে অপেক্ষা করতে হয়।

অবশেষে মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে, যেখানে আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের কাছ থেকে তিনি তার টেস্ট ক্যাপ গ্রহণ করেন।

এই সিরিজের আগে ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার দারুণ ফর্মে ছিলেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও, যে ফরম্যাটটি তার জন্য উপযুক্ত বলে খুব কম লোকই মনে করেছিল, মুরাদ আট ইনিংসে ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন, যা তার বহুমুখী প্রতিভা এবং মেজাজের প্রমাণ দেয়।

কক্সবাজারের যে ছেলেটি বিকেএসপি থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিটি স্তর পেরিয়ে এসেছে, সে অবশেষে দেশের ১০৮তম টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে ওঠে।

তার যাত্রার মতোই, মুরাদকে তার প্রথম টেস্ট উইকেটের জন্যও অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রথমে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লরকান টাকারের একটি ধারালো ক্যাচ ফেলে দিলে তিনি উইকেটবঞ্চিত হন। কিছুক্ষণ পরেই, আরেকটি সম্ভাব্য উইকেট তৃতীয় আম্পায়ার বাতিল করে দেন।

কিন্তু ধৈর্য, বরাবরের মতোই, ফল দিয়েছে। মুরাদের প্রথম টেস্ট উইকেট আসে যখন কার্টিস ক্যাম্পার ৪৪ রানে শান্তর হাতে ক্যাচ দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই টাকার (৪১) উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে টার্নে পরাস্ত হন এবং লিটন দাসের হাতে স্টাম্পড হন।

মুরাদ প্রথম দিনটি শেষ করেন ৪৭ রানে ২ উইকেটের চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান নিয়ে, যা এমন একজন অভিষিক্ত বোলারের পরিসংখ্যান যিনি অনেক আগেই তার জায়গা অর্জন করেছিলেন।

সংখ্যার বাইরে যা চোখে পড়েছে তা হলো তার শান্ত, অবিচল আচরণ, যে গুণাবলী বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে তার উত্থানকে সংজ্ঞায়িত করেছে।

তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ, চট্টগ্রাম বিভাগের পেসার হাসান মাহমুদ ছিলেন সবচেয়ে আনন্দিতদের একজন। দিনের খেলা শেষে হাসান বলেন, “মুরাদ আমার দৃষ্টিতে খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি তার সাথে অনেক প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছি এবং আমরা জুনিয়র পর্যায় থেকেই সতীর্থ। আজ তার অভিষেক খুব ভালো হয়েছে, সে সঠিক জায়গায় বল করেছে এবং তার পুরস্কার পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, সময়ের সাথে সাথে সে এই পর্যায়ে থিতু হয়ে যাবে।”

শ্যামলীর কংক্রিটের উইকেট থেকে সিলেটের টেস্ট অভিষেক, মুরাদের গল্পটি ধৈর্য, শৃঙ্খলা এবং বিশ্বাসের এক নীরব পুরস্কারের উপাখ্যান হয়ে রইল।

RELATED NEWS

Latest News