ভারতের নতুন উপ-রাষ্ট্রপতি সি.পি. রাধাকৃষ্ণন প্রথমবারের মতো আগামী শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাঁর নেতৃত্বে উচ্চকক্ষে আসতে পারে সংসদীয় বিতর্কে নতুন মাত্রা—ফলপ্রসূ আলোচনা, উন্নত পারফরম্যান্স ও জনগণের কল্যাণকেন্দ্রিক রাজনীতি।
রাজ্যসভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাধাকৃষ্ণন ছোট দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। বর্তমানে তাঁদের বক্তব্যের জন্য মাত্র দুই মিনিট সময় থাকে; নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী তা পাঁচ মিনিটে উন্নীত হতে পারে।
গত কয়েক মাসে রাধাকৃষ্ণন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে তিনি সংসদের কার্যকারিতা বাড়ানো, সময়ের সঠিক ব্যবহার, ছোট দলের প্রতিনিধিদের বেশি সময় দেওয়া এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির বদলে জনকল্যাণমূলক আলোচনায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
রাজ্যসভার এক কর্মকর্তা বলেন, “চেয়ারম্যান মনে করেন, সংসদের বিতর্ক যেন মূল বিষয় থেকে সরে না যায়। আলোচনাগুলো ফলপ্রসূ হতে হবে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশের ক্ষেত্র হওয়া উচিত নয়।”
গত বর্ষাকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভার উৎপাদনশীলতা ছিল মাত্র ৩৪ শতাংশ, আর লোকসভায় মাত্র ২৯ শতাংশ—পি.আর.এস. লেজিসলেটিভ রিসার্চের তথ্যমতে।
ছোট দলগুলোর সংসদ সদস্যরা বেশি সময়ের দাবি জানালে রাধাকৃষ্ণন তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, “দুই মিনিট সময়ের মধ্যে বক্তব্য দেওয়া প্রায় অসম্ভব। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ছোট দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের পাঁচ মিনিট পর্যন্ত সময় দেওয়া হতে পারে।”
রাধাকৃষ্ণনের এই উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়ের আমলে বিরোধীদল ও চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিরোধীদল প্রথমবারের মতো অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছিল, যা তিনি কারিগরি কারণে বাতিল করেন।
এরপর ২১ জুন ধনখড় স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করেন—স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে যা ছিল এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাধাকৃষ্ণন বিরোধী প্রার্থী সাবেক সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি. সুধর্শন রেড্ডিকে পরাজিত করে ভারতের ১৫তম উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংসদীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, ছোট দলগুলোকে বেশি সময় দেওয়া গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে এবং সংসদীয় বিতর্ককে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করবে।
আগামী ১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত শীতকালীন অধিবেশনে রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্বের প্রথম পরীক্ষা হবে। বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই স্বল্প মেয়াদী অধিবেশন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং সরকারের ‘আলোচনা এড়ানোর’ মনোভাবের সমালোচনা করেছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “যদি আলোচনা অর্থবহ হয়, তবে নতুন চেয়ারম্যান অধিবেশন সময়ের অতিরিক্ত চালাতে পারেন।”
