Tuesday, November 11, 2025
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্র সফরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্র সফরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক

প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের সফর; ১৪ বছরের যুদ্ধ-পরবর্তী নতুন অধ্যায়ে দেশটি

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা সিরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফর।

গত বছর বিদ্রোহী থেকে রাষ্ট্রনায়কে রূপ নেওয়া শারা ক্ষমতায় আসার পর এটি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর বলে বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক বছরে সিরিয়ার আন্তর্জাতিক অবস্থান আমূল পরিবর্তিত হয়েছে — রাশিয়া ও ইরানের ঘনিষ্ঠতা থেকে সরে এসে এখন দেশটি তুরস্ক, উপসাগরীয় রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে।

৪২ বছর বয়সী শারা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দ্রুত এক সামরিক অভিযানে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এরপর থেকেই তিনি বিশ্ব সফরে ব্যস্ত, সিরিয়ার পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ফেরানোর লক্ষ্যে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে মূলত নিরাপত্তা ইস্যু, সন্ত্রাসবিরোধী জোটে সিরিয়ার সম্ভাব্য অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা এই সফরের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি শারা খুব ভালো কাজ করছেন। এটি একটি কঠিন অঞ্চল, আর তিনি একজন কঠিন মানুষ — কিন্তু আমরা ভালোভাবে মিশেছি।”

গত মে মাসে রিয়াদে প্রথম সাক্ষাতের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের গতি বাড়ে। ট্রাম্প তখনই সিরিয়ার ওপর থেকে বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। যদিও ‘সিজার স্যাংশন অ্যাক্ট’ বাতিল করতে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।

এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের পথ খুলে যাবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

সম্প্রতি সিরিয়ার সামাজিক স্থিতি আবারও পরীক্ষার মুখে পড়েছে। আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন সংঘাতে ২,৫০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা নতুন সরকারের সামনে শাসনব্যবস্থা স্থিতিশীল করার বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে গাজা যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে নতুন শান্তি উদ্যোগও চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারকে মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শারার ব্যক্তিগত যাত্রাপথও নাটকীয়। তিনি ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আক্রমণের পর আল-কায়েদায় যোগ দেন এবং পরে মার্কিন কারাগারে বছরখানেক বন্দি ছিলেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ২০১৬ সালে তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় নিজের প্রভাব সুসংহত করেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তার ওপর থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার বাতিল করা হয়, এবং গত সপ্তাহে জাতিসংঘও তার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরোপিত সন্ত্রাসবাদ–সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ফিরাস মাকসাদ বলেন, “শারার ওয়াশিংটন সফর প্রমাণ করে সিরিয়া কত দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে—ইরানের প্রভাববলয় থেকে সরে এসে এখন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন শিবিরে যোগ দিচ্ছে। বিদ্রোহী থেকে রাষ্ট্রনায়ক—এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড়।”

RELATED NEWS

Latest News