অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফ বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে এবং পরবর্তী কিস্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নতুন রাজনৈতিক সরকার গঠনের পরেই হবে। রবিবার সচিবালয়ে একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তার ভাষ্যে, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সংস্কার বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে আইএমএফ স্বীকার করেছে। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণে সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। তিনি বলেন, কর রাজস্ব কম, এর কাঠামোগত কারণ আছে এবং নাগরিকদের কর অনুবর্তিতা দুর্বল। নতুন এনবিআর গঠনের কার্যক্রম দুই মাস স্থগিত থাকায় রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়েছে, এগুলো সমাধানে কাজ চলছে।
উপদেষ্টা জানান, আইএমএফ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে জোর দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো। তিনি বলেন, এখন অগ্রাধিকার হলো স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং একটি সুসংগঠিত সংস্কার কাঠামো নির্বাচিত সরকারের হাতে হস্তান্তর করা। কর কাঠামো পুনর্গঠন, সরকারি বেতন কমিশন পর্যালোচনা এবং ব্যাংকিং খাত শক্তিশালীকরণসহ বড় সংস্কার চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি অবস্থান না জানিয়ে বলেন, বড় কোনো সিদ্ধান্ত হলে সরকার সমষ্টিগতভাবে নেবে এবং তা উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। তিনি জানান, ১৫ নভেম্বর আইএমএফের সঙ্গে তার চূড়ান্ত আলোচনা নির্ধারিত আছে। ইতিমধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে, যেখানে আইএমএফ সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
কর ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য স্বাধীন অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উপদেষ্টা জানান। তিনি ব্যাংকিং খাতকে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিছু সংস্কার শুরু হয়েছে, বাকিগুলো ধাপে ধাপে এগোবে এবং এগুলো পরবর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কিস্তি বিতরণসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএমএফ আগামী বছর শুরুর দিকে আবার পর্যালোচনা করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি অগ্রগতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। সংস্থাটি দেখতে চায় নির্বাচিত সরকার সংস্কার কীভাবে এগিয়ে নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ষষ্ঠ ও সপ্তম কিস্তি ২০২৬ সালের জুনে ছাড় হতে পারে।
পটভূমিতে রয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি, যা সামষ্টিক স্থিতিশীলতা, রাজস্ব সংস্কার ও স্থিতিস্থাপকতা জোরদারে সহায়ক। ২৩ জুন চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের পর মোট বিতরণ দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালের জুনে মোট ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২৭ জানুয়ারি ২০২৭ পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চাপ কমেছে, ১৬ অক্টোবর মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার যা ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি আইএমএফ মিশন দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে বার্ষিক আর্টিকেল IV পরামর্শের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
