চতুর্থ পররাষ্ট্র দফতর পরামর্শ (FOC) বৈঠক শেষে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে নতুন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, সংযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ও কৃষিসহ বহু খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকটি সহ-সভাপতিত্ব করেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব আরুনি রানারাজা এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। সর্বশেষ এমন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালে ঢাকায়।
দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পূর্ণ পর্যালোচনার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) এবং ওষুধ শিল্প পার্কে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। অপরদিকে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের জন্য লজিস্টিকস, কৃষি, উন্নয়ন প্রকল্প ও পর্যটন খাতে সুযোগ তুলে ধরে।
বাংলাদেশ ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দেশটি।
ওষুধ বাণিজ্যে সুবিধা আনতে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ওষুধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানায়। উভয় দেশ বাণিজ্য আলোচনাকারী কমিটি ও বাণিজ্য ও নৌপরিবহন সম্পর্কিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক দ্রুত আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়।
সংযোগ (Connectivity) আলোচনায় অন্যতম মূল বিষয় ছিল। চট্টগ্রাম ও কলম্বোর মধ্যে সরাসরি বন্দর সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা যাচাই এবং “গ্রিন ট্যুরিজম”, “টি ট্যুরিজম” ও “বৌদ্ধ পর্যটন সার্কিট” উদ্যোগে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। পর্যটন সহযোগিতায় একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) শিগগিরই চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
কৃষি ও মৎস্য খাতে গভীর সমুদ্র মাছধরা, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও মিঠা পানির মাছচাষে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে দুই দেশ একমত হয়। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কৃষকদের জন্য ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রস্তাব দেয়।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশি নার্সদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণ সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। দুই দেশ তরুণ উন্নয়ন, ক্রীড়াবিজ্ঞান ও ক্রিকেট বিনিময় কর্মসূচি জোরদার করবে।
এছাড়া জাতীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনে ‘বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা টেক করিডোর’ গঠনের প্রস্তাব তোলে ঢাকা।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশ SAARC, BIMSTEC ও IORA কাঠামোর আওতায় যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কার সহযোগিতা বজায় রাখার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ।
বৈঠক চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমারাসুরিয়া ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি আগামী বছর পঞ্চম দফা পরামর্শ বৈঠকের জন্য শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিবকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত হাইকমিশনার আন্দালিব এলিয়াস এবং পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা। শ্রীলঙ্কার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার ধর্মপালা উইরাক্কোডি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
