Friday, November 7, 2025
Homeজাতীয়খুলনায় অবাধে চলছে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা

খুলনায় অবাধে চলছে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা

ফরাজীপাড়া ফুল মার্কেট ও শান্তিধাম মোড়ে খোলা দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিপন্ন প্রাণী

খুলনা শহরে প্রকাশ্যে চলছে বিপন্ন প্রাণী ও পাখির বেচাকেনা। শহরের ফরাজীপাড়া ফুল মার্কেট ও শান্তিধাম মোড় এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ব্যবসা, যেখানে “বার্ডস ফেয়ার” ও “শুখ পাখি” নামের দোকানগুলো নিয়মিতভাবে বন্যপ্রাণী বিক্রি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই।

সূত্র জানায়, এসব ব্যবসায়ী বন্যপ্রাণী বিশাল আকারে কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে পাঠান এবং বিপুল মুনাফা করেন। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বন্যপ্রাণী ধরা, বিক্রি, কেনা বা খাঁচায় রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ব্যবসাটি অব্যাহত রয়েছে।

সম্প্রতি দৈনিক সানের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে তোতা, লাভবার্ড, ডায়মন্ড ডাভ, মুনিয়া, খরগোশ, কচ্ছপ, কটন পিগমি হাঁস, কবুতর ও বিদেশি কুকুরের জাত।

ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেছেন, এসব প্রাণী পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে শিকারিরা এনে দেন। তারা ফাঁদ বা জাল ব্যবহার করে প্রাণীগুলো ধরে বাজারে সরবরাহ করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, “বন্যপ্রাণী শিকার শুধু প্রাণী হারানো নয়, এটি জলবায়ু ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে। বনই ৮০ শতাংশ জীববৈচিত্র্যের আবাস এবং বছরে ১০ কোটি টনের বেশি কার্বন শোষণ করে।”

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেকার যুবকদের অনেকেই এখন বন্যপ্রাণী শিকার ও বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, “জানি এটা বেআইনি, কিন্তু লাভ এত বেশি যে ঝুঁকি নিয়েই করি।”

এখন অনেক ব্যবসায়ী গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণী ‘অর্ডার’ নিয়ে সরবরাহ করছেন। শহরের গোপন গুদামগুলোতে শত শত প্রাণী রাখা হয় বলে জানা গেছে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, “ফরাজীপাড়া ফুল মার্কেটের এই ব্যবসা প্রমাণ করে যে অপরাধীরা দণ্ড পায় না। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা—দুজনের মধ্যেই সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, এর আগেও কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়েছে, শিগগিরই আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী এ অপরাধে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।”

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, “মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে শুধু সরকারি উদ্যোগে প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয়। সুন্দরবন রক্ষার জন্য যেমন বাঘ দরকার, তেমনি পরিবেশ রক্ষার জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণও অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইকোপার্ক বা সংরক্ষিত এলাকা যথেষ্ট নয়। তরুণ প্রজন্মসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভব।”

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • খুলনা

RELATED NEWS

Latest News