চলমান দুর্নীতি তদন্তের মধ্যে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল, যিনি লোটাস কামাল নামেও পরিচিত, এবং তার পরিবারের কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জমা দেওয়া পৃথক আবেদন গ্রহণের পর ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফাইজ সোমবার এই আদেশ পাস করেন।
যাদের কর নথি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন মোস্তফা কামালের স্ত্রী কাশ্মীরী কামাল এবং তাদের কন্যা কাশফি কামাল ও নাফিসা কামাল।
মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিচিত আয়ের বাইরে সম্পদ সংগ্রহ করেছেন এবং ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
দুদক দাবি করেছে, তার স্ত্রী কাশ্মীরী কামাল অপরাধে তাকে সহায়তা করেছেন। তিনি ৪৪ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ সংগ্রহ করেছেন এবং ২০টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন।
তাদের কন্যা কাশফি এবং নাফিসা কামালও ৫৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যথাক্রমে ১৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং ১৯৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে অভিযুক্ত।
এএইচএম মোস্তফা কামাল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের অর্থনীতি ও বাজেট প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে মোস্তফা কামাল এবং তার পরিবারের আর্থিক লেনদেন তদন্ত করছে। আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে বিস্তারিত ব্যাংক লেনদেন, সম্পদের তথ্য এবং আয়ের উৎসের বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
কর নথি জব্দের এই আদেশ তদন্তকারী সংস্থাকে অভিযুক্তদের আর্থিক কার্যক্রম এবং সম্পদের উৎস সম্পর্কে আরও গভীর তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করবে।
অভিযোগ অনুযায়ী, মোস্তফা কামাল তার পদমর্যাদা ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন এবং তার পরিচিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বিশাল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
পরিবারের সদস্যদের নামে খোলা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে বলে দুদকের অভিযোগ।
এই ধরনের বড় অঙ্কের লেনদেন স্বাভাবিক আয় থেকে সম্ভব নয় বলে তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে। তারা এসব লেনদেনের উৎস এবং উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখছে।
কর নথি জব্দ করা হলে তা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের ঘোষিত আয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে ব্যবধান স্পষ্ট হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সম্প্রতি প্রাক্তন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করেছে।
মোস্তফা কামাল ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ এবং আদালতের আদেশ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আদালত এই ধরনের মামলায় তদন্তকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন। কর নথি জব্দের আদেশ সেই আইনি প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি আগামী দিনগুলোতে চলবে। তদন্ত সম্পন্ন হলে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
