ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রবিবার জানিয়েছেন, ইসরায়েল নিজেই ঠিক করবে কখন শত্রুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে এবং কোন দেশগুলো গাজায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে।
এই ঘোষণা এমন সময় আসে যখন মিসরের উদ্ধার দল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে পৌঁছেছে। সেখানে তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে নিহত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করবে।
এএফপি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসরীয় পতাকা ওড়ানো ট্রাকগুলোতে ভারী যন্ত্রপাতি, বুলডোজার ও এক্সকাভেটর নিয়ে উদ্ধারকারীরা গাজায় প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে ছিল একটি ত্রাণ কমিটি, যারা আল জাওয়াইদা এলাকায় কার্যক্রম চালাবে।
মার্কিন মধ্যস্থতায় সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি সেনারা দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে গাজা থেকে সরে যাচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, আরব বা মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু ইসরায়েল তুরস্কের অংশগ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে। নিজ দলের কট্টর ডানপন্থীদের চাপের মুখেও নেতানিয়াহু রবিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে কঠোর অবস্থান নেন।
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি—কোনো আন্তর্জাতিক বাহিনী গ্রহণযোগ্য কিনা, তা ইসরায়েল নিজেই নির্ধারণ করবে।”
এদিকে, মানবিক সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজার অনেক এলাকায় দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা বিরাজ করছে। ত্রাণ কাফেলাগুলো পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না।
গাজার বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী হিয়াম মুকদাদ বলেন, “যখন যুদ্ধবিরতির কথা শুনলাম, আনন্দে আর দুঃখে দুটোই কেঁদে ফেলেছিলাম। আগে শিশুরা পার্কে খেলত, এখন তারা ধ্বংসস্তূপে খেলে।”
ইসরায়েল এখনো গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং জাতিসংঘের প্রতিটি ত্রাণ কাফেলার অনুমোদন নিজেই দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পরও অন্তত দুইটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করব, কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই।”
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় ১৫০ টন বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করেছিল, যখন তাদের দুই সৈন্য নিহত হয়। গত শনিবারও ইসলামিক জিহাদ সংগঠনের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দক্ষিণ ইসরায়েলে “সিভিল-মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (CMCC)” স্থাপন করেছে, যা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাম্প্রতিক সফরও সেই প্রচেষ্টার অংশ।
রুবিও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে যদি হামাস নিরস্ত্র হয়ে গাজার প্রশাসন হস্তান্তর করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি ‘ইয়েলো লাইন’ গাজার স্থায়ী সীমান্তে পরিণত হবে না, বরং শান্তি বাহিনী ধীরে ধীরে পুরো গাজাকে নিরস্ত্র করবে।”
অন্যদিকে, হামাসসহ প্রধান ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি প্রযুক্তিগত প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে। তবে হামাস এখনই অস্ত্র সমর্পণে রাজি হয়নি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
হামাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান মুসা আবু মারজুক সতর্ক করে বলেন, “হামাসকে বাদ দিলে গাজায় নিরাপত্তা শূন্যতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।”
হামাস জানিয়েছে, তারা এখনও ১৩ জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে—যার মধ্যে ১০ জন ইসরায়েলি, একজন ২০১৪ সাল থেকে নিখোঁজ ইসরায়েলি, একজন থাই এবং একজন তানজানিয়ান শ্রমিক রয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৮,৫০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ এই সংখ্যা “বিশ্বাসযোগ্য” বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মিসরীয় উদ্ধার দল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করলেও, ৮১ সদস্যের তুর্কি উদ্ধারকারী দলকে এখনো ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
