ভারতের চেন্নাই, নাগপুর বা কানপুর—যে মাঠেই যান না কেন, স্পিনারদের জন্য অনুকূল। শ্রীলঙ্কায় আরও বেশি। কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম যেন স্পিনারদের জন্য স্বর্গ। এমনকি রাতে, যখন সাধারণত ব্যাটিং সহজ হয়, তখনও এখানে বল ঘুরে ও গ্রিপ করে।
অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ইংল্যান্ডে দ্য ওভাল, দক্ষিণ আফ্রিকায় গেকেবেরহা—সব জায়গাতেই আছে এমন উইকেট, যেখানে ধীর বলবাজরাই বেশি সাফল্য পান।
প্রায় প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশেরই একটি স্বীকৃত “স্পিন সেন্টার” আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি নিঃসন্দেহে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
এখানে সবসময় বল ঘোরে। কখনও হয়তো অতিরিক্ত। দলগুলো জানে, টার্নই ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দু হবে। তাই এখন অনেকেই বলছেন, সময় এসেছে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুরকে স্পিন হাব হিসেবে ঘোষণা করার এবং দেশের অন্যান্য ভেন্যুগুলোকে ব্যালান্সড উইকেট হিসেবে গড়ে তোলার।
সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, “আমি অনেকদিন ধরে এটা বলছি। পাকিস্তান ইংল্যান্ডের কাছে হারার পর তারা স্পিন-বান্ধব উইকেট তৈরি করতে শুরু করে। ভারতও তাই করে। শ্রীলঙ্কা তো এমনিতেই স্পিনের জন্য বিখ্যাত। তাই উপমহাদেশে এমন উইকেট থাকা স্বাভাবিক।”
কিন্তু বাংলাদেশে এখনো স্পিন-বান্ধব উইকেটকে ঘিরে বিতর্ক থামছে না। প্রতিবার মিরপুরে ম্যাচ হলে উইকেট নিয়ে আলোচনা ক্রিকেটের আসল গল্পকেই ছাপিয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ওয়ানডে সিরিজও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাশার বলেন, “আমরা উইকেট নিয়ে অনেক বেশি কথা বলি। এটা আদর্শ নয়। মিরপুরে বল ঘুরবে—এটা কারও কাছে নতুন কিছু নয়। এক-দেড় বছর আগেই এখানকার এক টেস্টে পেসাররাই বেশিরভাগ উইকেট নিয়েছিল। তাই হোম অ্যাডভান্টেজকে বড় করে দেখা উচিত নয়।”
বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা জানি, মিরপুরের উইকেট সবসময় এমনই থাকে। আমি নয় বছর ধরে খেলছি, আমার অভিষেকও এখানেই। পার্থক্য খুব একটা নেই।”
তবে তিনি সামান্য পরিবর্তনের কথাও বলেন, “আগে উইকেটে কিছুটা ঘাস থাকত, এখন নেই। ঘাস থাকলে বল একটু স্কিড করত, এখন হয়তো একটু ধীর হয়। এটুকুই পার্থক্য।”
মিরাজ মনে করেন, হোম অ্যাডভান্টেজ ক্রিকেটেরই অংশ। “যেখানেই খেলবেন, সবাই নিজেদের মাঠের সুবিধা নেয়,” বলেন তিনি। “নিউজিল্যান্ডে সবুজ পিচ থাকে, বল সুইং করে। তাহলে বাংলাদেশেও আমরা আমাদের সুবিধা নেব। কারণ দিনের শেষে ফলটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে তিনি আরও যোগ করেন, “বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি আলাদা। সেটার জন্য দুই-তিন মাস আগেই পরিকল্পনা দরকার। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোম অ্যাডভান্টেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশ্ব ক্রিকেট এখন এমন উইকেট চায় যেখানে ফল হয়। এই প্রবণতার মধ্যেই মিরপুরের টার্নিং ট্র্যাক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পরিচয়। বিদেশি দলের জন্য এটি স্পিনের পরীক্ষাগার, আর বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য স্বাক্ষর।
