Sunday, October 26, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় ফিরিয়ে দেওয়া ফিলিস্তিনিদের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন, অভিযোগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের

গাজায় ফিরিয়ে দেওয়া ফিলিস্তিনিদের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন, অভিযোগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের

ইসরায়েল থেকে ফিরিয়ে আনা ১৯৫ মরদেহে হাত বাঁধা, গলা চেপে ধরা ও দাগের প্রমাণ মিলেছে

ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ—তাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন ও নিপীড়ন। গাজায় ফিরিয়ে দেওয়া মৃতদের দেহে সেই নির্যাতনের ভয়াবহ প্রমাণও মিলছে।

গাজার নাসের হাসপাতালের ফরেনসিক টিমের হাতে রয়েছে ১৯৫টি মরদেহ। এগুলো ইসরায়েল ফেরত দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, যেখানে ১৩ জন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে এই দেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক মরদেহে হাত পিছনে বাঁধা, চোখে কাপড় বাঁধা, গলায় দড়ির দাগ ও শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। অনেক দেহ এসেছে সম্পূর্ণ নগ্ন বা শুধু অন্তর্বাস পরা অবস্থায়।

নাসের হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ দহির বলেন, “দেহগুলো বরফে জমে থাকে, গলতে কয়েকদিন সময় লাগে। এ সময়েই পচন শুরু হয়, ফলে পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয় না।”

আরেক চিকিৎসক ডা. আলা আল-আস্তাল বলেন, “অনেক দেহে হাত-পায়ের বাঁধন এত টাইট ছিল যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। চোখের চারপাশেও গভীর দাগ দেখা গেছে, যা অস্বাভাবিক।”

গাজার ফরেনসিক কমিটির সদস্য সামেহ ইয়াসিন হামাদ বলেন, “কিছু মরদেহে আঘাতের দাগ, রক্ত জমাট ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটি স্পষ্ট নির্যাতনের ইঙ্গিত দেয়।”

বিবিসির হাতে থাকা ছবিগুলোতে দেখা যায়, অনেক দেহে হাত-পা বাঁধার গভীর চিহ্ন রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দড়ি বা কেবল-টাই এমনভাবে বাঁধা ছিল যে মৃত্যু আগে তা ব্যবহার করা হয়েছে বলেই ধারণা করা যায়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে কাজ করে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান এসব প্রতিবেদনকে “ইসরায়েলকে অপমানের প্রচেষ্টা” বলে মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গাজায় এটি একটি আন্তর্জাতিক ফরেনসিক জরুরি অবস্থা।” কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট অধ্যাপক মাইকেল পোলানেন বলেন, “সম্পূর্ণ মেডিকোলিগ্যাল ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব নয়।”

গাজায় ফিরিয়ে দেওয়া মরদেহগুলোর বেশিরভাগই এখনো অচিহ্নিত। নাসের হাসপাতালে জায়গার সংকটে অনেক দেহ গণকবরে দাফন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০টি দেহ শনাক্ত করা গেছে, বাকি ৫৪টি নামহীন অবস্থায় কবর দেওয়া হয়েছে।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের কোনো খোঁজ পাওয়ার আশায়।
রামি আল-ফারাহ বলেন, “যখন নিশ্চিত নই এটা আমার আত্মীয়ের দেহ কি না, তখন তাকে কবর দেওয়া খুব কঠিন।”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি গাজায় সাময়িক স্বস্তি আনলেও, বহু পরিবারের জন্য তা এনেছে শুধু অজানার কবর।

RELATED NEWS

Latest News