Friday, October 24, 2025
Homeজাতীয়মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অপরাধের বিস্তার: এক বছরে ৯ খুন, মাদকই মূল কারণ

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অপরাধের বিস্তার: এক বছরে ৯ খুন, মাদকই মূল কারণ

বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণে যুবক নিহত; ৫০০ মাদক বিক্রেতা ৩০টি পয়েন্টে সক্রিয়, বছরে লেনদেন প্রায় দেড় কোটি টাকার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, ১৯৭২ সালে বিহারিদের জন্য ৭.৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত, এখন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

গত এক বছরে এখানে নয়জন খুন হয়েছেন এবং অনেকেই আহত হয়েছেন বিরোধী মাদক চক্রের সংঘর্ষে। সর্বশেষ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভোরে এক যুবক নিহত হন।

নিহত যুবকের নাম মো. জাহিদ, পিতা মৃত মো. ইমরান হোসেন। তিনি কল্যাণপুরের এক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে কাজ করতেন।

বন্ধু আফতাব হোসেন জানান, সংঘর্ষের সময় বাইরে বের হলে “তার পায়ের কাছে বোমা বিস্ফোরিত হয়”। জাহিদকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ বলেন, অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

তিনি জানান, “গত এক বছরে ক্যাম্পে নয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমি দুই মাস আগে থানায় যোগ দিয়েছি। যোগদানের পর ক্যাম্প থেকে ১,০০০ জনকে গ্রেপ্তার এবং ২৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

দুই দিন আগেই সেনাবাহিনীর একটি দল ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩২টি ককটেলসহ কয়েকজনকে আটক করে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাদকই ক্যাম্পের অপরাধের মূল উৎস। প্রায় ৫০০ বিক্রেতা ৩০টি পয়েন্টে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও হেরোইন বিক্রি করে। বছরে প্রায় ১.৫ কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হয়, আর বেশিরভাগ সংঘর্ষ ঘটে এই মাদক অর্থ নিয়ে।

জাহিদের বোন বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা বারবার গ্রেপ্তার হলেও দ্রুত জামিনে ফিরে এসে আবার ব্যবসা শুরু করে।”

তিনি প্রশ্ন করেন, “এরা এত দ্রুত কীভাবে জামিন পায়?”

পুলিশ জানায়, অতীতে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত ইশতিক ও নাদিম। নাদিম ২০১৮ সালে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান, আর ইশতিক কোভিডে ভারতে মারা যান। এরপর তাদের অনুসারী ও নতুন কয়েকটি গ্রুপ ব্যবসার দখল নেয়।

বর্তমানে সক্রিয় চক্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পিচ্চি রাজা ও ভুইয়া সেলিমের দল, যাদের মধ্যে সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি।

অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তাওহিদুল হক বলেন, “জেনেভা ক্যাম্পের অপরাধ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে এখানকার মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “নিয়মিত অভিযান, সঠিক চার্জশিট ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্যাম্পের অপরাধ অনেকটাই কমানো সম্ভব।”

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ঢাকা

RELATED NEWS

Latest News