বিশ্ববাজারে তেলের দাম সোমবার আবারও কমেছে। অতিরিক্ত সরবরাহ ও যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথতার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।
সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিট (জিএমটি) পর্যন্ত ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৩ সেন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০.৭৬ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৫ সেন্ট বা ০.৯৬ শতাংশ কমে ৫৬.৯৯ ডলারে নেমে আসে।
গত সপ্তাহে উভয় সূচকই ২ শতাংশের বেশি কমেছিল, যা টানা তৃতীয় সপ্তাহের পতন। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) ২০২৬ সালে তেলের সরবরাহ উদ্বৃত্তের পূর্বাভাস দেওয়ায় বাজারে চাপ আরও বেড়েছে।
ফুজিতোমি সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক তোশিতাকা তাজাওয়া বলেন, “তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথতার আশঙ্কা—এই দুই কারণেই বিক্রির চাপ বেড়েছে।”
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে। দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এর মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য সংঘাতকে আরও জটিল করেছে।
গত সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা না কমলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
দুই দেশ সম্প্রতি পারস্পরিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে একে অপরের কার্গোবাহী জাহাজে অতিরিক্ত বন্দর ফি আরোপ করেছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য চলাচলে প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, রুশ তেল সরবরাহ নিয়েও অনিশ্চয়তা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার সতর্ক করেছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করলে তার দেশের ওপর “বৃহৎ শুল্ক” বজায় থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আরেকটি শীর্ষ বৈঠক করার বিষয়ে সম্মত হন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা বন্ধে চাপ দিচ্ছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প আহ্বান জানান, “যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে ইউক্রেনকেই কিছু ছাড় দিতে হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপের কারণে এশীয় ক্রেতারা ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার তেল কেনায় সীমাবদ্ধ হতে পারেন, যা চীনের জন্য সস্তা সরবরাহের সুযোগ তৈরি করবে বলে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন।
সরবরাহের দিক থেকেও চাপ বাড়ছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে তিন সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো তেল ও গ্যাস খনির সংখ্যা বেড়েছে বলে জানায় জ্বালানি সেবা প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।