Tuesday, October 21, 2025
Homeজাতীয়তারাগঞ্জে আলুর দরপতন, ক্ষতির মুখে চাষিরা

তারাগঞ্জে আলুর দরপতন, ক্ষতির মুখে চাষিরা

কেজিতে দাম মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সা, চাষ বাদে টোবাকোতে ঝুঁকির আশঙ্কা

রংপুরের তারাগঞ্জে আলুর দাম পড়ে গেছে ইতিহাসের অন্যতম নিম্ন পর্যায়ে। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সায়, ফলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

সরকারি নির্ধারিত ঠান্ডা সংরক্ষণমূল্য কেজিপ্রতি ২২ টাকা হলেও ক্রেতারা সে দামে কিনতে রাজি নন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ মৌসুমে তারাগঞ্জে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার টন আলু তিনটি কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়, আর এখন পর্যন্ত বের করা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ টন—গত বছরের তুলনায় অনেক কম।

চাষিদের দাবি, মাঠ পর্যায়ে আলু উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২২ থেকে ২৩ টাকা। সংরক্ষণ, পরিবহন, শ্রম ও প্যাকেজিং খরচ মিলিয়ে তা দাঁড়ায় ২৯ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা, কোল্ড স্টোরেজে ৮ টাকা। সংরক্ষণ খরচ ৬ টাকা ৭৫ পয়সা বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র ১ টাকা ২৫ পয়সা—অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ক্ষতি ২১ টাকার বেশি।

সোমবার তিনটি কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শনে দেখা যায়, বিক্রি প্রায় বন্ধ, কেজিপ্রতি দাম ৮ টাকা, আর অনেক গুদামই প্রায় খালি।

ইকরচালি প্রামাণিক পাড়ার কৃষক শিপুল ইসলাম বলেন, “সাত একর জমিতে আলু করেছি, কেজিপ্রতি খরচ পড়েছে ২৩ টাকা। দাম ১৪ টাকায় নেমে গেলে সংরক্ষণে দিই, ভেবেছিলাম দাম বাড়বে। এখন ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, খরচ বাদে হাতে কিছুই থাকছে না।”

সায়ের কাজীপাড়ার বড় চাষি নূর মোহাম্মদ বলেন, “কোল্ড স্টোরেজে জায়গা না পেয়ে বাড়িতে রাখতে হয়েছিল, এখন পচে যাচ্ছে। ট্রাকে করে ফেলে দিতে হয়েছে। দাম না বাড়লে সংরক্ষিত আলুও লোকসানে বিক্রি হবে।”

প্রামাণিকপাড়ার চাষি সোহরাব হোসেন বলেন, “কেজিপ্রতি মোট খরচ ২৯ টাকা, বাজারদর ৮ টাকা। সংরক্ষণ খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে ২ টাকারও কম। এভাবে চললে অনেকেই টোবাকো চাষে চলে যাবে।”

সিংহা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন জানান, “আমরা ১ লাখ ৫১ হাজার বস্তা আলু রেখেছিলাম। গত বছর এই সময়ের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বের হয়ে গিয়েছিল, এবার মাত্র ৩৮ হাজার বস্তা বিক্রি হয়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।”

এনএম কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, “২ লাখ ৬০ হাজার বস্তার মধ্যে এখনো ৫৫ হাজার ছাড়া বাকি সব গুদামে আছে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সব বের হয়ে যায়, কিন্তু এবার তা সম্ভব হবে না।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীবা রাণী রায় বলেন, “সরকারের আলু ক্রয় কর্মসূচি শুরু হলে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে আশা করছি। তবে এই ক্ষতির কারণে আগামী মৌসুমে অনেক চাষি আলু চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। আমরা মাঠপর্যায়ে তাদের সহায়তায় কাজ করছি।”

RELATED NEWS

Latest News