ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৯৮৮ কর্মচারী অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিতে পুনর্বহালের সুযোগ পেয়েছেন। আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী, তাদের চাকরিচ্যুতি অবৈধ ছিল এবং এখন আর কোনো আইনগত বাধা নেই তাদের পুনর্বহালে।
২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জেরে চাকরি হারান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিষয়টি আদালতে গেলে উচ্চ আদালতে একাধিক পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন রায় আসে। প্রথমে হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিলেও পরবর্তী রিভিউতে চাকরিগুলো অবৈধ ঘোষণা করে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি আপিল বিভাগে গেলে আদালত উভয় রায় বাতিল করে পুনরায় রিট শুনানির নির্দেশ দেয়। তাতে আবারও বলা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অবৈধ এবং তাদের চাকরি বাতিল করা হয়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীরা ২০১৬ সালে আপিল বিভাগে ‘সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল’ দাখিল করেন। সেই আপিলের রিভিউ শুনানির রায় ঘোষণা হয় আজ।
রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের সবাইকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। তাদের চাকরিচ্যুতির সময় থেকে পুনর্বহালের সময় পর্যন্ত পুরো সময়কে ‘অসাধারণ ছুটি’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সেইসঙ্গে তাদের জ্যেষ্ঠতা বা পদমর্যাদার কোনও ক্ষতি হবে না।
এছাড়াও, আদালত মানবিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছে—যে কর্মচারীরা দীর্ঘদিন চাকরি পাননি, অনেকেই মারা গেছেন, অপমান ও আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন—তাদের ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।
ব্যারিস্টার রহুল কুদ্দুস কাজল ও এটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান ব্যক্তিগতভাবে এই মামলায় যুক্ত ছিলেন। রায়ের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিন্ডিকেটের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুত রায় বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে এমন রায় পেয়ে কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকে এ রায়কে ‘বঞ্চনার অবসান’ ও ‘বিচারের জয়’ হিসেবে দেখছেন।
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, “আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় এখন আর পুনর্বহালে কোনও বাধা নেই। দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু হবে।” আদালতের এমন মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রায় বাংলাদেশের প্রশাসনিক ন্যায়বিচারের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।