আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে বুধবার ভোরে নতুন করে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পাকিস্তানি বাহিনী আফগান সীমান্তে হামলা চালায়। এতে বহু বেসামরিক প্রাণহানি ঘটে এবং শতাধিক আহত হয়। তালেবান দাবি করেছে, তারা পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কিছু পোস্ট দখল করেছে এবং তাদের অস্ত্র ও ট্যাংক জব্দ করেছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষে তাদের চারজন বেসামরিক আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের চামান জেলার প্রশাসক হাবিব উল্লাহ বঙ্গুলজাই বলেন, “তালেবান আমাদের সীমান্ত পোস্টে হামলা চালায়, তবে আমরা আক্রমণ প্রতিহত করেছি।”
সংঘর্ষটি প্রায় পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী হয় বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর সংঘর্ষ নতুন নয়। তবে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই সবচেয়ে বড় সংঘাত বলে পর্যবেক্ষকদের মত।
গত সপ্তাহের সংঘর্ষের পর থেকে উভয় দেশই কয়েকটি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রেখেছে। এতে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে সীমান্তে। পাকিস্তানই আফগানিস্তানের প্রধান খাদ্য ও পণ্য সরবরাহের উৎস হওয়ায় এতে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে।
সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়েছে ইসলামাবাদের অভিযোগে যে, পাকিস্তানে বেড়ে চলা সন্ত্রাসী হামলার পেছনে আফগান ভূখণ্ডে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের ভূমিকা আছে। তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।
চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। চীন উভয় দেশকে তাদের নাগরিক ও বিনিয়োগ সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া সংযমের পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংঘাত নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাকি ভারতের সফরে গেছেন। তার সফরে ভারত ও আফগানিস্তান সম্পর্ক জোরদারে সম্মত হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, তারা কাবুলে আবারও দূতাবাস খুলবে এবং আফগানিস্তানও ভারতে কূটনীতিক পাঠাবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।