ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুনরায় সেবাস্তিয়ান লেকোর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মাত্র চার দিন আগে পদত্যাগ করা এই নেতা আবারও দায়িত্ব পেলেন এমন এক সময়ে, যখন দেশটি বাজেট সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত।
শুক্রবার রাতে এলিসি প্রাসাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ম্যাক্রোঁ এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বৈঠকে কট্টর ডান ও বাম দলের নেতাদের বাদ দিয়ে বাকিদের সঙ্গে আলোচনা হয়।
লেকোর্নুর পুনরাগমন ফরাসি রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করেছে। মাত্র দুই দিন আগেই তিনি জাতীয় টেলিভিশনে বলেছিলেন, তিনি “পদটির পেছনে ছুটছেন না” এবং তার “মিশন শেষ।”
এলিসে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট লেকোর্নুকে নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, তাকে “সম্পূর্ণ স্বাধীনতা” দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নিতে।
৩৯ বছর বয়সী এই নেতা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকেই গ্রহণ করছি। বছরের শেষ নাগাদ ফ্রান্সের জন্য একটি বাস্তবসম্মত বাজেট নিশ্চিত করা ও নাগরিকদের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানই আমার লক্ষ্য।”
এই বছরের শুরুতে ফ্রান্সের সরকারি ঋণ জিডিপির ১১৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা ইউরোজোনে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ বছর বাজেট ঘাটতির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশ।
লেকোর্নু জানিয়েছেন, তার সরকারের কেউই আর্থিক শৃঙ্খলার দায় এড়াতে পারবেন না। এছাড়া ম্যাক্রোঁর মেয়াদ শেষ হতে মাত্র ১৮ মাস বাকি থাকায় তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন সরকারের সদস্যদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার আকাঙ্ক্ষা আপাতত সরিয়ে রাখতে হবে।
তবে সামনে তার বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা ভোট। জাতীয় সংসদে ম্যাক্রোঁর কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, আর সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা নেমেছে মাত্র ১৪ শতাংশে।
কট্টর ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির নেতা জর্ডান বারডেলা বলেছেন, “লেকোর্নুকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া এক প্রহসন।” তিনি দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট এখন আগের চেয়ে আরও বিচ্ছিন্ন ও বাস্তবতা থেকে দূরে।
এই পরিস্থিতিতে লেকোর্নু আবার সরকার গঠনে নামছেন। তিনি ইতিমধ্যে সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি, কিন্তু রক্ষণশীল রিপাবলিকান দলের নেতা ব্রুনো রিটাইয়োর এক মন্তব্যের পর সেই সরকার টিকে থাকতে পারেনি।
এখন কেন্দ্রপন্থী দলগুলো একা সরকার গঠনে অক্ষম, আর রিপাবলিকান দল ভেতরেও মতবিরোধ বাড়ছে। ফলে লেকোর্নু বামপন্থী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বামপন্থীদের আকৃষ্ট করতে ম্যাক্রোঁর দল ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০২৩ সালে পাস হওয়া বিতর্কিত পেনশন সংস্কারের কিছু অংশ স্থগিত করা হতে পারে, যা অবসরের বয়স ৬২ থেকে ৬৪ বছর করে।
তবে সোশ্যালিস্ট নেতা অলিভিয়ার ফওর বলেছেন, “কোনো নিশ্চয়তা না পেলে আমরা আস্থা ভোটে সমর্থন দেব না।” কমিউনিস্ট নেতা ফ্যাবিয়েন রুসেল বলেছেন, “জনগণ এখন পরিবর্তন চায়, আর ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে না।”
সবশেষে গ্রিনস দলের নেতা মারিন টন্ডেলিয়ে বলেন, “ম্যাক্রোঁর এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছি। এই পথে এগোলে ফল ভালো হবে না।”
ফরাসি রাজনীতি তাই আবারও অনিশ্চয়তার মুখে। নতুন প্রধানমন্ত্রী কতটা সফলভাবে দেশকে বাজেট ও রাজনৈতিক সংকট থেকে বের করতে পারেন, এখন সেটিই দেখার বিষয়।
