ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : ডিজনির বহুল প্রতীক্ষিত ‘Snow White’ রিমেকটি মুক্তির পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। সমালোচকদের মতে, এই সিনেমাটি এতটাই দুর্বল ও খাপছাড়া যে এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত—যেখানে সবধরনের দর্শক একযোগে একে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সিনেমার কাহিনী পুরনো ১৯৩৭ সালের অ্যানিমেটেড ‘Snow White’ গল্পের একটি আধুনিক সংস্করণ হিসেবে তৈরি হলেও, অনেকের মতে এটি আধুনিকায়নের ব্যর্থ একটি প্রচেষ্টা। মূল চরিত্রগুলোর আচরণ ও সংলাপে ছিল বাস্তবতা ও প্রেরণার অভাব, যা দর্শকের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়, রাজকুমারীর মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা হঠাৎ করেই এক যাদুকরী নারীকে বিয়ে করেন, যিনি পরে রাণী হয়ে ওঠেন এবং রাজাকে হত্যা করে রাজ্য দখল করেন। এরপর রাণীর নির্দেশে স্নো হোয়াইটকে বনেবন বাদ দিয়ে হত্যা করতে বলা হয়। কিন্তু এসব ঘটনা দর্শকদের কাছে বেখাপ্পা ও অসংলগ্ন মনে হয়েছে।
একাধিক অংশে চরিত্রগুলোর কৃত্রিম সংলাপ ও আচরণ সিনেমাটিকে বাস্তববিমুখ করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, রাণীর ‘সবার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর’ হওয়ার মোহের পেছনে কোন সুসংগঠিত প্রেক্ষাপট নেই—না আছে রাজনৈতিক প্রয়োজন, না ব্যক্তিগত ব্যাকস্টোরি। এ ছাড়া, স্নো হোয়াইট চরিত্রটিও অনুপ্রেরণাহীন এবং উদ্দেশ্যহীন একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, গল্পের মূল দুর্বলতা প্রেরণার অভাব। রাণী কেন স্নো হোয়াইটকে হত্যার জন্য এত কৌশলী পরিকল্পনা করলেন, কেন সরাসরি ব্যবস্থা নিলেন না—এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। একইভাবে, ‘ফেয়ারেস্ট’ হওয়ার মানে কি শুধুই সৌন্দর্য, নাকি তা ব্যক্তিত্বের ওপরও নির্ভর করে—এই দ্বিধায় দর্শক বিভ্রান্ত হয়েছেন।
সিনেমার একটি অংশে, স্নো হোয়াইট জাদু আয়নায় নিজের ‘ফেয়ারেস্ট’ উপাধি লাভ করেন, কিন্তু কেন বা কীভাবে—তা ব্যাখ্যা নেই। চলচ্চিত্রে আধুনিকতা আনার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে প্রয়োগ হয়নি। ইনস্টাগ্রাম বা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সৌন্দর্যের মূল্যায়ন কেমন, এমন একটি সমসাময়িক ভাবনা এখানে স্থান পেতে পারতো, কিন্তু নির্মাতারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বা দ্বন্দ্বও যথাযথভাবে ফুটে ওঠেনি। রাণী এবং স্নো হোয়াইটের মধ্যে “কঠোরতা বনাম কোমলতা”র একটি প্রতিপাদ্য থাকলেও তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হয়নি। ব্যান্ডিট, সিজিআই বামন, হঠাৎ জাগ্রত হওয়া রাজকন্যা—এসব ঘটনাও আলগা ও ভিত্তিহীন বলে মনে হয়েছে।
শেষমেশ, দর্শকের একাংশ মনে করছেন, সিনেমাটি মূলত ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ’ এর মত, যেখানে আধুনিকতার প্রচেষ্টা থাকলেও তা আঙ্গিকে বা গভীরতায় পৌঁছাতে পারেনি। ফলস্বরূপ, ‘স্নো হোয়াইট’ রিমেকটি এক বিরল উদাহরণ হিসেবে রয়ে গেল—যেখানে সবাই একত্রে সিনেমাটির ব্যর্থতা নিয়ে একমত।
যে কোনও পুরনো গল্পের পুনঃনির্মাণে শুধু পরিবর্তনের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট, সময়োপযোগী চরিত্র নির্মাণ ও শক্তিশালী প্রেরণা। ডিজনির এই ব্যর্থ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের নির্মাতাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে।