গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর শুক্রবার হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নিজেদের পরিত্যক্ত ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে শুরু করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ঘোষিত এই অস্ত্রবিরতির পরবর্তী ধাপে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে “অস্ত্রমুক্ত” করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
গাজার সবচেয়ে বড় নগর এলাকা গাজা সিটিতে ফিরছেন বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ। এলাকাটি কয়েকদিন আগেও ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
৪০ বছর বয়সী ইসমাইল জায়দা বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবেশীদের ঘর নেই, পুরো মহল্লাই উধাও হয়ে গেছে।”
অস্ত্রবিরতির খবর শোনার পর অনেকেই পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন, যদিও জানেন যে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের অনেকে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হেঁটে ফিরছেন নিজেদের এলাকায়।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস থেকে আহমেদ আল-ব্রিম নামের এক ব্যক্তি জানান, “আমাদের এলাকা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ঘরে কিছুই পাইনি, এমনকি শীতের কাপড়ও না। শুধু ধ্বংসস্তূপ।”
৪০ বছর বয়সী মাহদি সাকলা বলেন, “দুই বছর আমরা বাস্তুচ্যুত ছিলাম। এখন ধ্বংসস্তূপের ওপর হলেও ফিরে যাচ্ছি। এটিও আমাদের জন্য এক ধরনের আনন্দ।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েলি সরকার হামাসের সঙ্গে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, পাশাপাশি গাজা থেকে আটক ১,৭০০ জনকেও ছেড়ে দেবে।
মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীবাহী ট্রাক দ্রুত গাজায় প্রবেশ করবে। দুই বছরের যুদ্ধের পর লাখো মানুষ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন, যাদের ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু বড় নগর অঞ্চল থেকে সরে যাবে, তবে তারা এখনো উপত্যকার প্রায় অর্ধেক এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “আমরা গাজায় থাকব যতক্ষণ না এটি সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ হয় এবং হামাস অস্ত্র ত্যাগ করে। শান্তিপূর্ণভাবে না হলে কঠোর উপায়ে তা করা হবে।”
শুক্রবার সকালে খান ইউনুস এবং নুসেইরাত এলাকায় কিছু ইসরায়েলি সেনা অবস্থান তুলে নিলেও কিছু এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। উপকূলীয় রাস্তা থেকে গাজা সিটিতে অবস্থানরত বাহিনীও আংশিকভাবে সরে যায়।
অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে গাজায় আপাত শান্তি ফিরলেও ধ্বংসস্তূপের ভেতর জীবনের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি ফিলিস্তিনিদের জন্য।
