৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম, তথ্যগত ভুল এবং অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) তিন দিনের সময় দিয়েছেন অভিযোগগুলোর জবাব দিতে, অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থী, যেমন জীবন আহমেদ অভি, রাজীব ও আবু সালেহ।
জালাল আহমেদ বলেন, “১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি প্রশ্নপত্রটি অতি জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল। অনেক সময় প্রশ্ন বুঝতেই লেগে গেছে, ফলে পূর্ণাঙ্গভাবে উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রশ্নপত্রের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়নি।”
তিনি অভিযোগ করেন, বেশ কিছু প্রশ্নে সঠিক উত্তর বিকল্পের মধ্যে ছিল না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “সেট-১ এর ১৪৬ নম্বর প্রশ্নে ৪.০০ গিগাহার্টজ প্রসেসরের ক্লক সাইকেল টাইম জানতে চাওয়া হয়, যার সঠিক উত্তর ০.২৫ ন্যানোসেকেন্ড হলেও বিকল্পে তা ছিল না।”
আরেকটি প্রশ্নে (নম্বর ১১০) ইরানের ফোর্ডো নিউক্লিয়ার এনরিচমেন্ট সেন্টার কোন প্রদেশে অবস্থিত, তার সঠিক উত্তরও ছিল না।
পরীক্ষার্থীরা বলেন, অনেক প্রশ্নে একাধিক সঠিক উত্তর ছিল। যেমন সেট-১ এর ১২০ নম্বর প্রশ্নে “কোন দেশ ওপেকের সদস্য নয়?”—এর উত্তর হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ—দুটিই সঠিক হতে পারে। এমন প্রায় ১৫–১৬টি প্রশ্নে সমস্যা ছিল বলে দাবি তাঁদের।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, খুলনায় অন্য সেটের প্রশ্ন ব্যবহার করা হয়, যা স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
পরীক্ষার্থীদের ভাষ্য, এবার প্রিলিতে উত্তীর্ণের হার ছিল বিসিএস ইতিহাসে সবচেয়ে কম। ৪৭তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ১০,৬৪৪ জন, যা গত আটটি বিসিএসের তুলনায় অনেক কম।
জালাল আহমেদ বলেন, “এত কম উত্তীর্ণের কারণ সম্পর্কে পিএসসিকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা পিএসসির কাছে নয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে—
পদের সংখ্যা অনুযায়ী ৬ থেকে ৮ গুণ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ করা
পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিক উত্তরকী ও কাট মার্ক প্রকাশ
সব বিভাগ ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নে ভারসাম্য রাখা
পরীক্ষার প্রতিটি ধাপের নম্বর প্রকাশ করা
নন-ক্যাডার বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন করে যোগ্য প্রার্থীদের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মতো মাইগ্রেশন ও ওয়েটিং লিস্ট পদ্ধতি চালু করা
কেন্দ্রীয় ডাটাবেইস তৈরি করে দ্বৈত নিয়োগ রোধ
লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ
টেলিটক এসএমএস সমস্যার সমাধান
সংবাদ সম্মেলনের শেষে প্রার্থীরা বলেন, “আমরা মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাকরি চাই, ভাগ্যের নয়। পিএসসি দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।”
