হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের গাজা অভিযান দুই বছরে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (OCHA) জানায়, গাজা জুড়ে ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন। ২১৩টি হাসপাতাল ও ১ হাজারের বেশি স্কুল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, গাজার ৩৬টির মধ্যে মাত্র ১৪টি হাসপাতাল এখনো আংশিক কার্যকর রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে এবং বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে চেষ্টা করছে। তবে হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েল নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে।
গত মাসে জাতিসংঘের এক অনুসন্ধান কমিশন জানিয়েছে, গাজায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ গণহত্যার শামিল। ইসরায়েল এই অভিযোগকে “পক্ষপাতদুষ্ট ও কেলেঙ্কারিপূর্ণ” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬৫ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২০০ জন নিহত হন হামাসের প্রথম দফার হামলায়। এছাড়া গাজা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৬৬ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং প্রায় তিন হাজার আহত হয়েছেন।
গাজায় এখনো ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জনের জীবিত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও দ্রুত কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত মেলেনি।
জাতিসংঘের বিশ্লেষণ বলছে, গাজার ৮২ শতাংশ এলাকা হয় যুদ্ধক্ষেত্র নয়তো উচ্ছেদ আদেশের আওতায়। প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার মানুষ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন। দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের অবস্থা ভয়াবহ, খাবার ও চিকিৎসা সংকট চরমে।
খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় ৫ লাখ মানুষ বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মুখে। এ পর্যন্ত অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ১৭৭ জন, যাদের মধ্যে ৩৬ শিশু।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল জানিয়েছে, গাজার ৬০ শতাংশের বেশি গর্ভবতী নারী ও নতুন মায়েরা মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন।
ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ তুলে নিলেও মানবিক সহায়তা এখনো যথেষ্ট নয়। সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যবাহী সহায়তা ট্রাকের প্রায় ৭৩ শতাংশই ক্ষুধার্ত জনতা বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটকা পড়ে।
মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মানুষের কাছে এখনো যথেষ্ট পরিমাণে খাবার, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে।
