Tuesday, October 7, 2025
Homeখেলাধুলাক্রিকেট১৫তম ওভারে ‘মেইডেন’, পরের ওভারেই ঝড়—সাইফ হাসানের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

১৫তম ওভারে ‘মেইডেন’, পরের ওভারেই ঝড়—সাইফ হাসানের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

শান্ত ব্যাটসম্যান থেকে বিধ্বংসী ছয় মারার যন্ত্রে পরিণত হয়েছেন সাইফ হাসান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে মূল ভূমিকা তাঁর

১৫তম ওভারে মেইডেন, পরের ওভারেই দুই ছক্কা। এমন দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় না, কিন্তু সেদিন সেটাই ঘটেছিল। বাংলাদেশ দলের ব্যাটার সাইফ হাসান দেখালেন কীভাবে ধৈর্য আর পরিকল্পনা মিলিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।

রোববার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ১০৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন বাংলাদেশ কিছুটা চাপে, তখন শান্ত ছিলেন সাইফ। আগের ওভারে রশিদ খানের শেষ ওভারটি ঝুঁকি না নিয়ে খেলে দেন তিনি। তখনও অনেকেই ভাবছিলেন, হয়তো গতি হারাচ্ছে ইনিংস। কিন্তু পরের ওভারেই পরিস্থিতি বদলে যায়। নবাগত বাশির আহমেদের ওভারে দুই ছক্কা মেরে ১৭ রান তুলে দেন সাইফ। সেখান থেকেই ম্যাচের গতি ঘুরে যায় বাংলাদেশের পক্ষে।

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১২ বল হাতে রেখে ছয় উইকেটে জিতে নেয় ম্যাচটি এবং ৩–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়।

নতুন রূপে সাইফ

২০২৫ সালে টি২০ দলে ফেরার পর থেকে সাইফের ব্যাটিংয়ে এসেছে আমূল পরিবর্তন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২৪টি ছক্কা, যা দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তিন ম্যাচে তিনি করেছেন ৮২ রান, যার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৯.০৯। আফগানিস্তান সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি, কেবল তানজিদ হাসান তামিমের পরেই।

পুরো সিরিজে বাংলাদেশ দল মোট ২৮টি ছক্কা মেরেছে, এর এক-তৃতীয়াংশ এসেছে সাইফের ব্যাট থেকে। তাঁর ছক্কাগুলো এসেছে বিভিন্ন ধরনের বোলারের বিপক্ষে—ডানহাতি পেসার আবদুল্লাহ আহমাদজাইয়ের বিপক্ষে তিনটি, বাঁহাতি মিডিয়াম বাশির আহমেদের বিপক্ষে তিনটি, আজমাতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বিপক্ষে দুটি এবং মুজিব উর রহমানের বিপক্ষে একটি।

ধারাবাহিক পারফরম্যান্স

এশিয়া কাপে সাইফ ছিলেন বাংলাদেশের সেরা রান সংগ্রাহক। চার ইনিংসে ১৭৮ রান করে গড় ৪৪.৫০ এবং স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৮.০৫। লঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে দুটি অর্ধশতকও করেন তিনি। তাঁর ১২টি ছক্কা ছিল দলের মোট ছক্কার প্রায় অর্ধেক।

ম্যাচ শেষে সাইফ বলেন, “আমি গত এক-দুই বছর ধরে এমন ব্যাটিং করছি। কোচ ফিল সিমন্স আমাকে পরিষ্কার পরিকল্পনা দিয়েছিলেন। আমি শুধু সেই অনুযায়ী খেলেছি।”

দেশীয় লিগেও তাঁর ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ৮৪ রান করেছেন তিন ম্যাচে, স্ট্রাইক রেট ১২৭.২৭। টপ এন্ড সিরিজেও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে করেছেন ১৩২ রান।

টেস্ট ব্যাটার থেকে টি২০ তারকা

এক সময় তাঁকে শুধু টেস্ট ব্যাটার বলা হতো। ২০২১ সালে ছয়টি টেস্ট খেলে বাদ পড়েছিলেন সব ফরম্যাট থেকে। কিন্তু এবার তিনি নিজের গল্পটাই বদলে দিয়েছেন। ধৈর্য ধরে খেলা সেই সাইফ এখন দলের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটারদের একজন।

বাংলাদেশের টি২০ ব্যাটিংয়ে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে আনার পেছনে সাইফের ভূমিকা স্পষ্ট। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে, ধৈর্য, পরিকল্পনা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কেউ নিজের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News