Monday, October 6, 2025
Homeআন্তর্জাতিকওডিশার কাটকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত, সহিংসতার পর কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ

ওডিশার কাটকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত, সহিংসতার পর কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ

দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, আহত পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারের শান্তি আহ্বান

ভারতের ওডিশা রাজ্যের কাটক শহর সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর। এক হাজার বছরের পুরোনো এই শহরে শনিবার রাত থেকে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় প্রশাসন ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে এবং ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে দর্গাহ বাজার এলাকায় দুর্গা বিসর্জন শোভাযাত্রার সময় উচ্চ শব্দে বাজানো সংগীতকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। রাত দেড়টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাদ থেকে ইট ও বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে এবং দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

আহতদের মধ্যে কাটকের উপ-কমিশনার অফ পুলিশ (ডিসিপি) খিলারি ঋষিকেশ দ্যানদেও রয়েছেন, যাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ পর্যন্ত অন্তত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার এস দেব দত্ত সিং জানান, “যারা পাথর নিক্ষেপে জড়িত ছিল তাদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। আরও গ্রেপ্তার হবে।”

রবিবার সন্ধ্যায় আবারও উত্তেজনা দেখা দেয় যখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোটরসাইকেল মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের পূর্ব প্রান্তের বিদ্যাধরপুর থেকে শুরু হয়ে দর্গাহ বাজার হয়ে সিডিএ সেক্টর ১১ পর্যন্ত যায়।

এই সময় গৌরিশঙ্কর পার্ক এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ পুনরায় হালকা বলপ্রয়োগ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে।

সহিংসতার পর প্রশাসন রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাটক মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ও আশপাশের এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও এই সময়ে বন্ধ থাকবে।

কাটকের দর্গাহ বাজার, গৌরিশঙ্কর পার্ক ও বিদ্যাধরপুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আধা-সশস্ত্র বাহিনীও (সিএপিএফ) মোতায়েন রয়েছে।

ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি বলেন, “কাটক শহর বহু শতাব্দী ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক। কিছু দুষ্কৃতিকারীর কারণে শান্তি বিনষ্ট হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজ্যের পুলিশ মহাপরিচালক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি বৈঠক করেছেন।

শনিবারের সহিংসতার পর প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকা প্রতিমা বিসর্জন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মোট ১২০টি প্রতিমা নিরাপদে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। শহরের সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল জোরদার করা হয়েছে।

RELATED NEWS

Latest News