প্রায় দুই বছরের গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা সমর্থন পেয়েছে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে। এর মধ্যে আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ বিভিন্ন মুসলিম ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা।
হোয়াইট হাউস প্রকাশিত পরিকল্পনায় রয়েছে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, হামাসকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “হামাস সাড়া দিলে ভালো, আর যদি না দেয় তাহলে এর পরিণাম হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।”
মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন
মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ইন্দোনেশিয়া ভবিষ্যতে গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে, আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, ট্রাম্প এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনাকে ‘সৎ ও আন্তরিক উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করলেও হামাস এখনো বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কাতার জানায়, তারা শিগগিরই আলোচনা করবে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী এটিকে “ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের রেসিপি” বলে উল্লেখ করেছে। গাজা এলাকার সাধারণ মানুষও পরিকল্পনাটিকে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
ইউরোপীয় সমর্থন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, গাজায় চলমান ট্র্যাজেডির অবসান চাইছে তারা। চীনও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উত্তেজনা কমাতে সহায়ক সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে।
প্রস্তাবনায় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ভূমিকা রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ব্লেয়ার বলেছেন, এই পরিকল্পনা গাজায় তাৎক্ষণিক স্বস্তি আনতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ খুলতে সক্ষম।
ভবিষ্যতের রূপরেখা
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী গাজা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজে এবং এতে টনি ব্লেয়ারসহ অন্য নেতারাও যুক্ত হবেন। কমিটিতে থাকবে দক্ষ ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা, তবে হামাসকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
পরিকল্পনায় শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথও খোলা রাখা হয়েছে। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, এ ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের সমর্থনে পরিকল্পনাটি আলোচনার নতুন দিগন্ত খুলেছে। এখন দৃষ্টি সবার দিকে যে হামাস কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং এটি বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হয় কি না।
