Monday, June 23, 2025
Homeরাজনীতিশেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে গণভবনের শেষ ২৪ ঘণ্টা

শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে গণভবনের শেষ ২৪ ঘণ্টা

ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অস্থির ও সংবেদনশীল দিন। শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের অবসানের দিনটি। সেই দিনের গণভবনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, সিদ্ধান্তহীনতা এবং শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত প্রতিবেদনে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম রোববার ট্রাইবুনালের বিচারকদের সামনে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, পদত্যাগের আগের দিনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।

৪ আগস্ট সারাদেশে দলীয় অস্ত্রধারীদের মাধ্যমে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। গুম, গ্রেপ্তার ও প্রাণহানির পরও সরকার ছাত্রজনতার আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়। সেদিন রাতেই একদল উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরদিন সকালে কারফিউ আরও কঠোর করার নির্দেশ দেন।

৫ আগস্ট সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সেনাবাহিনীর তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক গণভবনে উপস্থিত হন। শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি আপনাদের বিশ্বাস করে পদ দিয়েছি। এখন আপনারা কঠোর হতে পারছেন না কেন?”

আইজিপি জানান, পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি আর সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এরই মাঝে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির কারণে কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সহায়তা চান। শেখ রেহানা বোনের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন পদত্যাগের জন্য।

শেষ পর্যন্ত বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হস্তক্ষেপে শেখ হাসিনা রাজি হন। তবে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ রেকর্ড করতে চাইলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী শাহবাগ ও উত্তরা থেকে ছাত্রজনতা গণভবনের দিকে রওনা হওয়ায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দর থেকে ভারতে রওনা হন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকাল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতিবেদন রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরল দলিল হয়ে থাকবে। একদিকে পরিবার, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনী এবং ছাত্র আন্দোলনের প্রবল চাপ—সবমিলিয়ে এক অনন্য বিদায়।

RELATED NEWS

Latest News