জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে যৌথ সমৃদ্ধির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, বিমস্টেক, বিবিআইএন, এশিয়ান হাইওয়ে এবং সাসেকের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নয়নে কাজ করছে। তার মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ন্যায্যতা ও সহমর্মিতা নিশ্চিত করেই যৌথ উন্নয়ন সম্ভব।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগিতায় অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এর অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘ ওয়াটার কনভেনশনে যোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আসিয়ানসহ কার্যকর আঞ্চলিক ফোরামে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
তিনি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান। ড. ইউনূস বলেন, প্রতিষ্ঠার চার দশক আগে সার্ক কিছু সাফল্য অর্জন করলেও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবু প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো টিকে আছে এবং এটি এখনো মানুষের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, অর্থায়নের ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে, অথচ দাতা দেশগুলোর সহায়তা কমছে। তিনি দাতা দেশগুলোকে অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি, বিশেষ করে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে তিনি অনুদান ও ঋণের পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসার প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, এ ধরনের উদ্যোগ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে এবং মানবসৃজনশীলতাকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকারের তিন স্তম্ভেই জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। তবে বর্তমানে বহুপাক্ষিক কূটনীতি চাপের মুখে রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘকে টিকে থাকতে হলে স্বচ্ছতা ও আন্তরিক সংলাপ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কারের নামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠরোধ করা যাবে না, বরং বাস্তবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির ডা. তাসনিম জারা ও অন্যান্য নেতারা ছিলেন। এছাড়া পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।