ডেনমার্কে টানা দুই দিনে একাধিক ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশটির দুটি প্রধান বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েকটি সামরিক স্থাপনায়ও প্রভাব পড়ে। বিষয়টিকে হাইব্রিড হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছে ডেনিশ কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় পশ্চিম জুটল্যান্ড অঞ্চলের অলবর্গ বিমানবন্দর তিন ঘণ্টা এবং বিলুন্ড বিমানবন্দর এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। উভয় বিমানবন্দর পরদিন সকালে আবার চালু হয়। একই সময়ে এসবিয়ার্গ, সনডারবর্গ এবং স্ক্রিদস্ট্রুপ এয়ারবেসসহ কয়েকটি স্থাপনায় ড্রোন উড়তে দেখা যায়।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রলস লুন্ড পলসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি নিছক কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি পদ্ধতিগত। আমরা এটিকে হাইব্রিড হামলা হিসেবে বিবেচনা করছি।” তবে তিনি যোগ করেন, ডেনমার্ক সরাসরি কোনো সামরিক হুমকির মুখে নেই।
ডেনিশ সেনাবাহিনীর প্রধান মাইকেল হাইল্ডগার্ড স্বীকার করেছেন, দেশের ড্রোন প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। তিনি বলেন, “আমাদের সক্ষমতা আছে, তবে আরও বাড়ানো প্রয়োজন।”
এদিকে রাশিয়ার দূতাবাস কোপেনহেগেনে এক বিবৃতিতে মস্কোর সম্পৃক্ততার অভিযোগকে “অযৌক্তিক” বলে উল্লেখ করেছে।
বিশ্লেষক পিটার ভিগো জ্যাকবসেন মনে করেন, ইউরোপে রুশ প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ হতে পারে এই অনুপ্রবেশ। তার ভাষায়, “রাশিয়া সীমার ভেতরেই এমন কিছু করছে যা ন্যাটোর সামরিক প্রতিক্রিয়া উসকে দেবে না, তবে উদ্বেগ বাড়াবে।”
ডেনমার্ক সম্প্রতি প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট বাড়িয়েছে এবং দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া স্ক্রিদস্ট্রুপ এয়ারবেসের কাছে ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড তাদের আকাশে প্রবেশ করা সন্দেহভাজন রুশ ড্রোন ভূপাতিত করে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নরওয়ের রাজধানী অসলোতেও।
ডেনমার্ক সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ন্যাটোর ৪ নম্বর ধারা (Article 4) প্রয়োগ করবে কিনা, যা নিরাপত্তা নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পরামর্শের সুযোগ দেয়।
আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আয়োজন করতে যাচ্ছে ডেনমার্ক। এর ঠিক আগে এই অনুপ্রবেশ দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।